রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী সেতুর উপর ভাঙ্গা রেল দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। এই বড়াল নদীর উপর ব্রিটিশ আমলের নির্মিত রেলসেতু। দির্ঘদিন যাবৎ নড়বড়ে অবস্থায় থাকলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই। সেতুর উপর পশ্চিম দিকে রেললাইনের জয়েন্টের স্থানে ৬ ইঞ্চি ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে স্লিপারের উপর কাঠের বাতা দিয়ে আটকানো রয়েছে। ফলে ১৩টি ট্রেন প্রতিদিন দুইবার করে ২৬ বার রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ঘটনাটি জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা পরিদর্শন করেন।
গতকাল সোমবার বেলা ১০টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড়াল নদীর উপর সেতুর পশ্চিম দিকে রেললাইনের জয়েন্টের স্থানে ৬ ইঞ্চি ভেঙ্গে গেছে। তারপরও এই ভাঙ্গা লাইনের উপর দিয়ে ১৩টি ট্রেন প্রতিদিন দুইবার করে ২৬ বার রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সেতুর উপর স্লিপারের সঙ্গে লাইন আটকানোর জন্য একটি স্লিপারের দুই পাশে ৮টি করে পিন দেয়ার কথা থাকলেও রয়েছে কোনটাতে দুটি, আবার কোনটাতে তিনটি, আবার কোনটাতে একটিও নেই। এছাড়া কোনটানে নাট বল্টু, ক্লিপ, হুক কিছুই নেই। দুই লাইনের গোড়ায় ফিসপ্লেটে চারটি নাট-বল্টু থাকার কথা। কিন্তু স্লিপারে তা নেই। স্লিপারগুলোও বহু যুগের পুরাতন। বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এ রেল সেতুর উপর স্লিপারের সঙ্গে লাইন আটকানো কিছু পিন খোলা, সেগুলো হাত দিয়ে বের করা যাচ্ছে, লোহার পিনের জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে কিছু কাঠের গুজ, স্লিপারের লোহার মোটা পাতের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা প্লেন সিটের পাত, স্লিপার আটকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কাঠের বাতা। এ সেতুটিতে মোট ব্যবহার করা হয়েছে ২৬২টি স্লিপার, সেই ি স্লিপারে ২ হাজার ৯৮টি ক্লিপ থাকার কথা। কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র প্রায় ৯২৮টি। এর কিছু অংশে কাঠের গুজ এবং অন্য জায়গায় ফাঁকা রয়েছে। ২৬২টি স্লিপারের মধ্যে ৬০টি স্লিপার অত্যান্ত ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির পূর্ব দিক থেকে দুটি পিলারের পর তিন নম্বর পিলারটির নিচে কয়েক বছর আগে গোড়ায় পাথর ফেলা হয়। সেই পাথরগুলো পিলার থেকে দুরে সরে গেছে। সেখানকার পিলারের গুড়ায় পাথর, মাটি কিছুই নেই। ফলে পিলারের উত্তর দিকের নিচে ফাঁকা হয়ে গেছে। ফলে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
রাজশাহীর পি-ডাব্লু আই এর ওয়েমেনের প্রধান ইয়াকুব আলী বলেন, সেতুর উপর ভাঙ্গা স্থান মেরাততের কাজ শুরু করেছি। ট্রেন এস্থানে এসে ধীরে ধীরে পার করা হচ্ছে। আমি আড়ানীর ১৪ নম্বর রেল সেতুর ২৩৫ নম্বর থেকে কালাবিপাড়া ২৪১/০ নম্বর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রেল রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে রয়েছি। এ এলাকার রেলের সমস্যা ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
রাজশাহীর পি-ডাব্লু আই ভবেশ চন্দ্র রাজবংশী বলেন, তার কাছে কাঠের গুজ ও বাতা ব্যহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিন বরাদ্দ না থাকায় ঝুঁকি এড়াতে কাঠের গুজ ও ট্রেন চলাচলের সময়ে স্লিপার যেন না নড়ে সে জন্য কাঠের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া আড়ানী সেতুর নষ্ট হয়ে যাওয়া ৬০টি স্লিপারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দেয়া হয়েছে। সেগুলো পেলে তাৎক্ষনিক লাগানো হবে।
গেটম্যান ও স্থানীয় কুশাবাড়িয়া গ্রামের লায়ের উদ্দিন বলেন, সেতুটির কাঠগুলো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। এ কাঠগুলো পরিবর্তন করা দরকার। আর অনেক স্থানে পিন না থাকায় ট্রেন চলাচল করার সময়ে কাঠ সরে যায়। পিন কম থাকার কারণে কোন রকম ট্রেন চলাচলের জন্য কাঠের বাতা দিয়ে স্পিপার আটকে দিয়েছে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক সেতুর উপর ভাঙ্গা লাইন পরিদর্শন করে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিম প্রধান প্রকৌশলী আলফাত মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বিষযটি জানার পর তাৎক্ষনিকভাবে মেরামতের কাজ চলছে। আমাদের এই অঞ্চলের রেল সেতুগুলো অনেক পুরাতন হলেও এখনো অনেকটা ভালো। আজ অবধি কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। রেল চলার সময় জাম্পিং এ ক্লিপারগুলো সরে বা নড়ে না যায়, এজন্য কিছু স্থানে কাঠের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে।