ধর্ষণ অতঃপর বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো স্বামীকে পিটিয়ে আহত অবস্থায় অজ্ঞান করে পুলিশে সোহার্দ্য করে সাজানো মামলা ফাঁসিয়ে দিল একটি প্রভাবশালী পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানাধীন পশ্চিম কুর্শা গ্রামে। যার মামলা নং-নিকলী থানা ৫(১২)২০১৯। রুজুকৃত ধারা-৩৮০/৪৬১/৪১১ মোতাবেক। ধর্ষিতা রেশমা আক্তার বলেন, আমি অসহায় তাই জহিরদের ঘরে আশ্রিত থাকতাম। এই সুযোগে জহির গত ২৪,সেপ্টেম্বর ২০১৯খ্রি. রোজ মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১০টা ৩০মিনিটে আমাকে ডাক দিয়ে বলে চাচা ঘরে আছে? উত্তরে নেই বললেও দরজাটা খুলতে বলেন। আমি দরজা খুলতেই আমার ঘরে প্রবেশ করে দরোজা বন্ধ করে দিয়ে আমার মুুখ চেপে ধরে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে একপর্যায়ে আমাকে ধর্ষণ করে এমনকি গোপনে একটি ভিডিও ফুটেজ ধারন করে। একদিন আমার স্বামী বিষয়টি দেখে ফেলে। তখন সব সত্য ঘটনা বলতে বাধ্য হই। এরপর জহির মিয়া আবদুর রহমান নামে একজন ব্যক্তিকে আমার সাথে ধর্ষণ করতে নিয়ে আসেন। প্রতিবাদ করলে ভিডিও প্রকাশ করে দিবে ভয় দেখিয়ে আমাকে আবারো ধর্ষণ করে।
ধর্ষিতার স্বামী আলম মিয়া জানান, আমি অভাব অনটনের সংসারে দিন-রাত তাদের ভাইয়ের দেয়া জায়গায় ক্ষুদ্র একটি হোটেলে কাজ করতাম। বিষয়টি জানার পর পারিবারিকভাবে জহিরের পরিবারকে জানালে উল্টো আমাকে ধর্ষণকারীর সহোদর নিকলী থানা ছাত্রলীগের অলিখিত সভাপতি ইমরুল হাসান প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলে “বিষয়টি বলাবলি করলে তোকে জীবনের শেষ করে ফেলব” আমাদের বিরুদ্ধে থান হাজত করে কিছুই করতে পারবে না, তুই নিজেই ধ্বংস হর্য়ে যাবে। ১৬ ডিসেম্বর রোজ সোমবার আমার অনুপস্থিতিতে ইমরুল হাসান ও তার সহোদর রহিমা আক্তারসহ তাদের পরিবারের বেশ কয়েকজন মিলে আমার স্ত্রীকে চাপে ফেলে ছোটছোট বাচ্চাদেরকে পর্যন্ত ঘর হতে বের করে দিয়ে জহিরকে নির্দোষ প্রমান করতে পুনরায় একটি ভিডিও ধারন করে। স্বামী আলম মিয়া বাড়িতে এসে অবুঝ শিশুদের কান্নায় বিজড়িত কন্ঠে ঘটনাটি শুনার পর অবস্থা বেগতিক দেখে সাংবাদিকের সঙ্গে মুখ খোলেন। গণমাধ্যম কর্মীরা প্রশ্নোত্তর পর্র্বে গত ১৭,ডিসেম্বর ২০১৯খ্রি. মঙ্গলবার একটি ভিডিও ধারন করেন। ঘটনাক্রমে নিকলী থানা হতে এস আই ইসমাইল হোসেন তাৎক্ষনিক আলমের বিরুদ্ধে একটি মামলার তদন্তে আসেন। আলম মিয়া নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে তার স্ত্রীর উপর ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি জানান। ২১,ডিসেম্বর ২০১৯খ্রি. রোজ শনিবার একদল গণমাধ্যম কর্মী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ পরিবার বর্গের বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসে আলমকে মুঠোফোনে বাজারে আসতে বলে। আলমের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সাংবাদিকরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। এই সময় নিকলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরুল হাসান নিজে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে এবং তার নেতৃত্বে অপরাধীচক্রের সমন্বয়ে আলমকে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে বেধরক মারপিট করে অজ্ঞান অবস্থায় নিকলী থানা পুলিশের হাতে সোহার্দ্য করে। এ ঘটনায় রাতে অভিযোগ দিয়ে সকালে হাজতে প্ররণ করে। আলামের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন যার নাম্বার ০১৯১০৮৪৮৯৮৭ সম্বোলিত একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনসহ দোকান বিক্রয় করা প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার টাকা ও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে আলমের পরিবার এ প্রতিবেদকে জানান। তবে এই ব্যপারে নিকলী থানা ছাত্রলীগের বিতর্কিতও অলিখিত সভাপতি ইমরুল হাসানের নিকট এই প্রতিবেদক জানতে চান“আলম মিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার পর নিকলী টু কিশোরগঞ্জস্থ মূল রাস্তার পাশে কুর্শা বাজারে স্বাক্ষাত করার পর মিনিট-কয়েকের মধ্যেই আপনার দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছে এমনকি আপনি বাদী হয়ে একটি সাজানো মামলায়ও ফাঁসিয়ে দিয়েছেন?”এ প্রশ্নের জবাবে ইমরুল হাসান বলেন, সত্য ঘটনায় মামলা দায়ের করেছি।
বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মুখে মুখে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য এলাকাবাসী জানান প্রভাবশালীদের বিরেদ্ধে সত্য ঘটনার বিচার চাইতে যাওয়াটাই আজ আলমের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসী আরও জানান তাদের অপকর্মের বিরেুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার মানে হলো বিপদ ডেকে আনা। এদের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস নাই তাই মনে মনে ঘৃণা করি।
কথিত আছে এই পরিবারটি অবৈধ উপায়ে কামাল ব্রিক ফিল্ড তৈরি করায় রোদানদীতে ইটের রাবিশ ফেলে মাছ চাষের অভয় আশ্রমটি করছে ধ্বংস, সংলগ্ন একটি মাদ্রাসা ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটানোর পাশাপাশি হাট-বাজারের জনচলাচলেরও বিঘœ ঘটছে আর কালো ধোঁয়ায় করছে পরিবেশ দূষণ। একই মালিকের যৌথ মালিকানা সামিয়া ব্রিক ফিল্ড নামে একই ধানাধীন বনমালীপুর ও আঠারর বাড়ীয়া গ্রামের দুই ফসলি আবাদি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করার কারণে অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এমনকি রাস্তা ঘেঁষে ইটভাটা নির্মিত হওয়ায় কারণে সেখানেও জনচলাচলের ব্যঘাত ঘটছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত মাটি বোঝাই করার কারণে মেঠো ও সরু রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে ও ইটভাটা বন্ধের দাবিতে দফায় দফায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দায়ের করেও প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীরা আইনের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয় ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত অদক্ষ ড্রাইভারদের দ্বারা প্রাণ হারলো ৫ম শ্রেণীর ছাত্র নিকলী উপজেলার কামালপুর গ্রামের ময়না মিয়ার ছেলে মোশারফ, পশ্চিম কুর্শা গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে সাদেক, ও পাচরুখী গ্রামের যুবক সেন্টু মিয়া। এ ছাড়া আহত হয়েছে অনেকেই। ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়েছে নাম মাত্র। নিহত কামালপুর গ্রামের মোশারফের সহোদর মন্টু মিয়া আক্ষেপ করে বলেন “ওরা প্রভাবশালী এদের বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমা করে কিছুই করতে পারবো না তাই নামমাত্র টাকায় চাপের মুখে মীমাংসা করতে বাধ্য হয়েছি”
কথিত আছে অভিযোগের ভিত্তিতে এই প্রভাবশালী অপরাধীচক্রের সদস্যদের মাদক ব্যবসা, জুয়া, নারী সংগঠিত ব্যবসা, মানব পচারের দায়ে অত্র পরিবারবর্গের অনেকে জেল, হাজত ও জরিমানা দেওয়ার প্রমাণও বিদ্যামান। অনুসন্ধানে জানা যায় অসামাজিক কার্যকলাপ করে একের পর এক পার পেয়ে যাওয়ায় অপরাধের প্রবনতা তাদের তীব্রতর হয়ে উঠেছে। অবৈধ্য অর্থের বিনিময়ে ওরা সিদ্ধ গড়ে তুলেছে একটি প্রতারক চক্র। যে কারণে পাওনাদার ব্যক্তিদের টাকা চাইতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবনাশংকায় ভোগার দৃষ্টান্তও রয়েছে। সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তার অভাবে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সাহস দেখায় না।
নাম প্রকাশ না কারার শর্তে এক প্রবীণ অ’লীগ নেতা বলেন, ওরা সুবিধাবাদী পার্টি করে ওদের কোন দল নেই, ওরা অপারাধ ঢাকার জন্য অবৈধ অর্থের বিনিময়ে পার্টির পদ ভাগিয়ে নিয়ে অবৈধ সুবিধা ভোগ করে। পার্টির দোহাই দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করে বেড়ায়। ওরা দলের ভামূর্তি ক্ষন্ন করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক স্থানীয় নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জহির ২০১১,সালে নিকলী উপজেলার ছাত্রদলের সেক্রেটারি প্রার্থী হওয়ায় তাকে সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছিল। ওরা সুবিধাবাদী দল করে। সাংবাদিকরা প্রশ্নের জবাবে জহিরের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে।
এ বিষয়ে এ প্রতিনিদিকে নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকি বলেন, আলমের বিরুদ্ধে একলক্ষ একান্ন হাজার টাকা তালা ভেঙ্গে গদ্দিঘর হতে নিয়ে যাওয়ায় এবং ত্রিশ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ায় মামলা নিয়েছি। আলমের পরিবারের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। আলমের সাথে আমার কোন কথা হয়নি। তবে তার স্ত্রীর কাছে থেকে আলমকে গ্রেফতারের পরদিন প্রায় দুইমাস আগের ঘটে যাওয়া বিষয়টি জানতে পেরেছি।