অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। এসব ভোগান্তির অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ, যা আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। ধুলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও, সুনির্দিষ্ট আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ এবং আমাদের কিছু সচেতনতা ও কার্যকরী পদক্ষেপ তা অনেক কমিয়ে আনতে পারে।
বায়ুদূষণ রোধে জেল-জরিমানার বিধান রেখে দেশবাসীকে পরিশুদ্ধ বায়ু উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে নির্মল বায়ু আইন, ২০১৯ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জানানো হয়, বায়ুদূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুমানের উন্নতি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অংশের বায়ুমান সন্তোষজনক অবস্থায় রাখার জন্য, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য ও নাগরিকের জীবন এবং বিশুদ্ধ বায়ু সেবনের অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানও আইনটি প্রণয়নের লক্ষ্য।
যথাশিগগিরই সম্ভব চূড়ান্ত করে আইনটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। খসড়া আইনে বায়ুদূষণের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে অপরাধীর ১০ বছরের সাজা বা কমপক্ষে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
আইনটি প্রণীত হলে পরিশুদ্ধ ও লাগসই প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া, অবকাঠামো নির্মাণ, উন্নয়ন ও পরিবহন ব্যবস্থা উৎসাহিতকরণের মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধ করা যাবে। তবে আমাদের দেশে আইন প্রণয়ন করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আর একটি আইন করার পর সেটি বাস্তবায়ন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত দেখা যায়। একারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাই আগের থেকে সবগুলো দিক বিবেচনা করে এগুনো উচিৎ। বায়ু দূষণ রোধ করা না গেলে অচিরেই বড় বিপদের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। বৈশি^ক দূষণ থেকে হয়তো বাঁচা সম্ভব নয়, তবে স্থানীয়ভাবে নিজেদের প্রতিরোধব্যাবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে তা আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়াবে। তাই বায়ু দূষণ রোধ তথা নির্মল বায়ুর জন্য যে আইন প্রণয়নের চিন্তা করা হচ্ছে তার জন্য কালক্ষেপন না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এর প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।