ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেছেন, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে অবস্থিত স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার ময়নাতদন্তের তিনটি প্রতিবেদনের মধ্যে একটি হাতে এসেছে। কিন্তু সেখানে তাকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) রুম্পার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সংশ্লিষ্ট থানার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট হস্তান্তর করা হবে।
ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্তের সময় যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল রিপোর্ট এসেছে। সেখানে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে ‘অন্য যেসব পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট আসার পর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া হবে।’ তার আগে রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে, না তিনি আত্মহত্যা করেছেন- তা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার আগে বলা সম্ভব নয়। রুম্পা পুলিশ পরিদর্শক রোকনউদ্দিনের মেয়ে।
এরআগে রুম্পার লাশ শনাক্ত হওয়ার পর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একে হত্যাকা- দাবি করে তার বিচারের দাবিতে সড়কে নামে। এ সময় তাদের মুখে আসে সৈকতের নাম, প্ল্যাকার্ডে ধর্ষণের অভিযোগও লেখা হয়।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সৈকতকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক শাহ মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, ৪ ডিসেম্বর রাতে রুম্পার লাশ পাওয়ার আগে বিকালে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের বাইরের রাস্তায় তাকে সৈকতের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। তখন প্রেম-ভালবাসা নিয়ে কথা উঠলে আসামি সৈকত কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য রুম্পাকে অনুরোধ করে। এরই প্রেক্ষিতে রাত ২২:৪৫ ঘটিকায় ভিকটিমকে ওই আসামিসহ তার সহযোগীরা হত্যা করে লাশ ছাঁদ থেকে ফেলে দেয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এদিকে রুম্পার এক বান্ধবীর সঙ্গে সৈকতের যে কথোপকথনের অডিও ক্লিপ ছড়িয়েছে, তাতে সৈকতকে বলতে শোনা যায়, ‘৪ তারিখে আমার একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিল। আমাকে ইনভাইট করা হয়েছিল আমাদের এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে। দেন আমি ওইখানে গেছিলাম। আমি তো রুম্পাকে বুঝায়ে বলছি যে আমাদের মধ্যে রিলেশন সম্ভব না।’
রুম্পার পরিবারের সদস্যরা জানায়, দুটো টিউশনি করতো রুম্পা। সেদিনও সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে টিউশনিতে বেরিয়েছিলেন। পরে সাড়ে ৬টার দিকে বাসার নিচে এসে ফোন করে পুরানো একজোড়া স্যান্ডেল পাঠিয়ে দিতে বলেন। স্যান্ডেল বদলানোর সময় কানের দুল, আংটি, মোবাইল ফোন দিয়ে আবার বেরিয়ে যান তিনি।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, ‘যে তিনটি ভবনের মাঝে রুম্পার মৃতদেহ পাওয়া গেছে, সেখানকার একটি ভবনের প্রবেশমুখে ৬টা ২৭ মিনিটে রুম্পার শারীরিক গঠনের মতো একজনকে ঢুকতে দেখা গেছে সিসিটিভি ভিডিওতে। কিছুটা অস্পষ্ট ওই ছবি। ফলে সেটা রুম্পা কি-না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
উল্লেখ্য, রুম্পা পরিবারের সঙ্গে থাকতেন মালিবাগের শান্তিবাগে। গত ৪ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনের গলি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আশপাশের কোনো ভবন থেকে পড়ে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করলেও সেই রাতে তাকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পরদিন পরিবারের সদস্যরা মর্গে গিয়ে রুম্পাকে শনাক্ত করেন। ঘটনাটি রহস্যজনক হওয়ায় রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের সেই রাতেই অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ১১ ডিসম্বের রুম্পার বন্ধু আবদুর রহমান সৈকতকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তবে রুম্পার সহপাঠীদের ভাষ্য আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিবিএর ছাত্র সৈকতের সঙ্গে রুম্পার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাছাড়া সৈকতও আগে স্ট্যামফোর্ডে পড়তো।’ ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) মরদেহ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের বিজয়নগরে দাফন করা হয়েছে।