‘ইন্টারনেটের অপব্যবহারের মাধ্যমে শিশু যৌন নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। শিশুরা বিশেষত সাইবার বুলিং শিকার হয় সবচেয়ে বেশী। সাইবার বুলিংয়ের প্রভাবে শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকে। অনেকসময় বিষণœতায় এবং হতাশায় আক্রান্ত হয়। এমনকি পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারেনা, যার ফলে পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়ে। সবসময় আতঙ্কগ্রস্থ থাকার ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। অনেকেই সাইবার বুলিং এর চাপ নিতে না পেরে আত্মহত্যার পথেও পা বাড়ায়।’ ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং ট্যুরিজমের মাধ্যমে শিশুর যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক আলোচনা সভায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরীতে অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র কনফারেন্স রুমে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের সাথে এ বিষয়ে একটি সংলাপ সভা করেন এসিডি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অনলাইনে শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রেভাইডার (আইএসপি) এবং সাইবার ক্যাফে মালিকগণের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ, গণসচেতনতা তৈরিতে আইএসপি ও সাইবার ক্যাফে মালিকগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যারা অভিভাবকদের ফিল্টারিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ/অবহিতকরণ, প্রচলিত আইনে দন্ডনীয় সাইবার অবরাধ সম্পর্কে সংযোগগ্রহিতাদের অবহিতকরণ করতে পারেন।
সোনালী সংবাদের সিনিয়র রিপোর্টার তবিবুর রহমান মাসুমের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এসিডির প্রোগ্রাম কর্মকর্তা মো. রহুল আমিন। সভায় ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং ট্যুরিজমের মাধ্যমে শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন এসিডি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আলী হোসেন। পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় প্রকল্পের উদ্দেশ্য, উল্লিখিত বিষয়ে এসিডির কার্যক্রম, বাংলাদেশে শিশুর অবস্থা, শিশু ও নারী নির্যাতন পরিস্থিতি, অনলাইনে শিশুদের উপর নির্যাতন ও শোষণ প্রক্রিয়া, ইন্টারনেটে শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ ও সাইবার নিরাপত্তা এবং ইন্টারনেটসেবা প্রদানকারীদের অধিকার কর্তব্য বিষয়ে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও অনলাইনে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয়, বিদ্যমান আইনের অপূর্ণতা ইত্যাদি বিষয়সমূহ বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতন ও শোষণ প্রতিরোধে সরকার, অভিভাবক এবং ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি কিছু সুপারিশ উঠে আসে।
এসময় মুক্ত আলোচনায় আলোচকরা বলেন, ইন্টারনেটে শিশু যৌন নির্যাতন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই অভিভাবকসহ সকলকেই আরো বেশি সচেতন হতে হবে। এক্ষত্রে শিক্ষকদের ভুমিকা অন্যতম। আলোচকরা আরো বলেন, যেন শিক্ষার্থীরা স্মার্ট ফোন নিয়ে স্কুলে আসতে না পারে সেদিকে সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষক মিলে শিশুদের ইন্টারনেটের সুফল ও কুফল সম্পর্কে বুঝাতে হবে। কারণ, প্রযুক্তি থেকে শিশুদের দূরে রাখলে এই অপরাধ কমবেনা বরং অভিভাককে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে আরো আপডেট হতে হবে। সন্তান কোন সাইট সার্চ করছে, কিভাবে করছে এটা বাবা মায়ের জানা থাকলে সন্তানরাও সজাগ থাকবে। তাই অভিভাবককে প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।