শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা মনোনীত হয়েছেন রোকেয়া খাতুন।রোকেয়া খাতুনের পিতার নাম মৃত শেখ আব্দুর রউফ, মাতার নাম মৃত জামেনা খাতুন। সে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা গ্রামের মৃত অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্ত্রী।
রোকেয়া খাতুন জানান, তিনি ১৯৪৭ সালে ময়মনসিংহ জেলার মধুপুরে জন্ম গ্রহন করেন। ১৪ ভাই-বোনের সংসারে তিনি ছিলেন ৪র্থ সন্তান। তার পিতার পক্ষে তাদের লেখা পড়া সহ সংসার চালানো খুবই কষ্টকর ছিল। ১৯৬৩ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন। এরপর খুলনাতে দাদা-দাদীর বাড়ী চলেন আসেন এবং বিএল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার পূর্বেই তার পরিবার বিয়ে দিয়ে দেন। তখন তার স্বামী নুরুল ইসলাম কেসি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। শ্বশুর বাড়ির পরিবেশ অনুকূল থাকায় তিনি শ্বশুর বাড়ী থেকে লেখাপড়ার সুযোগ পান। ১৯৬৬ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ১৯৬৯ সালে বিএ পাশ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি কালীগঞ্জ সলিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে বিএড করেন এবং চাকরিরত অবস্থায় ১৯৯১ সালে প্রাইভেটে এমএ পাশ করেন। তিনি তার ছেলের সাথে এক সাথে এমএ পাশ করেন। যেহেতু তার নাম রোকেয়া খাতুন তাই বেগম রোকেয়ার আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে তিনি নারী শিক্ষা, বাল্য বিবাহ নিরোধ ও যৌতুক প্রথা বন্ধ করার জন্য অনেক সময় বাড়ী বাড়ী গিয়ে ছাত্রীদের অভিভাবকদের অনুপ্রনিত করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর সলিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালনকালে হাজার হাজার ছাত্রীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তার ছাত্রীরা আজ অনেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি যখন তার ছাত্রীদের সাফল্যের কথা ভাবেন তখন তিনি সত্যিকার অর্থে সুখলাভ করেন।
তিনি আরো জানান, দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবনে আলো জ্বেলে অবশেষে ২০০৭ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েও তিনি বসে নেই। তিনি ছোট ছোট শিশুদের শিক্ষায় নিয়জিত আছেন। বর্তমানে তিনি জাপান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর আওতায় একটি স্কুল সুনিকেতন পাঠশালাতে প্রিন্সিপাল হিসাবে কর্মরত আছেন। একনিষ্ঠতা ও সততার সাথে দ্বায়িত্ব পালনের জন্য বিভিন্ন সময়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে সম্মাননা পেয়েছেন। আর এ জন্যই তিনি শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন।