মোল্লাহাটে ভুয়া দলিল সৃষ্টি ও নামপত্তনের মাধ্যমে সরকারী জমি আত্নসাত ঘটনায় জড়িত চক্রের সীমাহীন রোষানলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই ঘটনার সঠিক তথ্যদাতা (অভিযোগকরী) জনৈক পুলেন্দ মন্ডল। লোভী ভূমি কর্মকর্তা ও স্থানীয় অসাধু কয়েক ব্যক্তির যোগসাজসে উপজেলাধীন কামারগ্রাম মৌজার ০.৫৯ একর সরকারী জমি আত্নসাত ঘটনার প্রতিকার দাবীতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে অভিযোগ করার কারণে ওই চক্রের রোষানলে পড়েছেন তিনি। সঠিক তথ্য প্রমাণ ভিত্তিক অভিযোগের আলোকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশে কেবলমাত্র নামপত্তন বাতিল হলেও অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। আর সেকারণে ভূমি অফিসের অসাধূ কর্মকর্তা ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর রোষানলে পৈত্রিক বৈধ জমি হারাতে বসেছেন তিনি।
প্রায় ৮মাস পূর্বে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তর বরাবরে লিখিত অভিযোগ ও তথ্যানুসন্ধানীতে প্রকাশ, ৫৪ নং কামারগ্রাম মৌজার এস.এ. ৫৮৯ ও ৭০৩ নং খতিয়ানে ৩৩৬, ৩০২ এবং ৩০০ নং দাগে রেকর্ডীয় মালিক সুকুমার পাইক ও রমনী পাইক গং এর জমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে অর্পিত সম্পত্তি (খ) তফসিলে যায়। উক্ত মালিক গং ভারতে যাওয়ার পর বিগত প্রায় ৬০ বছরেও আর ফিরে আসেননি। এদিকে কতিপয় অসাধু ও ভূমি দস্যু উক্ত জমি আত্বসাতের জন্য বিভিন্ন প্রকার অপকৌশল খোজেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট আটজুড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ইউঃ ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারঃ) মোঃ নুরুল ইসলাম যোগদান করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই ভূমি দস্যুদের। উক্ত কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলামের সহযোগীতায় সুরেন্দ্রনাথ মন্ডল ও বরদাকান্ত মল্লিকের নামে অর্পিত ওই সম্পত্তির একটি ভূয়া দলিল তৈরী করা হয়। যার নং-১৬২৬, তাং-২২/০২/১৯৬৩ ইং, ভলিয়ম নং-৩৩, দাতা-সুকুমার পাইক গং। উক্ত দলিল মূলে ১৯৫০ ধারায় ১২৭/১৫-১৬ ও ১৩০/১৫-১৬ নং-নামপত্তনের কেস করা হয়। সে মোতাবেক (এর নায়ক) ইউঃ ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম তদন্তের নামে সরকারী উক্ত সম্পত্তি ভূয়া দলিলের অনুকুলে নামপত্তনের প্রস্তাব করেন এবং প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় রেকর্ড দেন।
যেহেতু দীর্ঘ ৬০ বছরেও রেকর্ডীয় মূল মালিক গং ভারত থেকে আর বাংলাদেশে আসেন নি, সেহেতু বিষয়টি জানারপর স্থানীয়রা হতবাক হণ, এই ভেবে যে, এতোবড় অসত্য কিভাবে সম্ভব ? পরবর্তীতে উল্লেখিত নম্বরের দলিল তুলে দেখা যায়, দাতা ও গ্রহিতা এবং মৌজা কোনটিরই মিল নাই। সেকারণে এর যথাযথ প্রতিকারের দাবীতে লিখিত অভিযোগ করেন পুলেন্দু মন্ডল।
তথ্য সংগ্রহকালে কয়েক শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এহেন ঘটনার যথাযথ প্রতিকারের দাবীতে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের দৃষ্ঠি আকর্ষণ করেছেন।
অপকৌশলের মাধ্যমে মিউটেশন (নামপত্তন) প্রাপ্ত হরবিলাশ মন্ডলের ছেলে অমল মন্ডল ও বরদা কান্ত মল্লিকের ছেলে অনিল মল্লিক (ছেলু) বলেন-তাদের ক্রয় করা সম্পত্তি রেকর্ড করেছেন, ভূমি অফিসের নায়েব তাদের কোন হয়রানী না করে কাজ করে দিয়েছেন, এমনকি তিনি তদন্তেও আসেননি, কেবল তার পিওন একদি তাদের বাড়ীতে আসছিলেন। উক্ত নম্বরের দলিলের দাতা- গ্রহিতা এবং তফশীল পরিচয় কোনটিরই মিল না থাকার বিষয়ে তারা বলেন, উক্ত দলিল তারা ঘরে পেয়েছে, আর দলিল সঠিক না হলে নায়েব স্যার রেকর্ড দিতেন না। কারন স্যার খুব ভালো মানুষ। আমরা স্যারের কথার বাইরে কিছুই করিনাই।
উক্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম তার বর্তমান কর্মস্থল মোল্লাহাটের উদয়পুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে এ প্রতিবেদককে জানান-ইতি মধ্যে রেভিনিউ স্যার (অতিঃ জেলা প্রশাসক রাজস্ব) ফোন করে ওই রেকর্ড বাতিল করতে বলেছেন। নিজের অপরাধ আড়াল করতে তিনি আরো বলেন-পিওন তার সামনে ফাইল ধরেছে তাই তিনি না দেখেই স্বাক্ষর করে দেন। তা ছাড়া অর্পিত সম্পত্তি যদি কেউ চায় তবে, তাকে দেওয়ার সরকারী আদেশ আছে।
উল্লেখ্য, উপজেলা ভূমি প্রশাসন ভূয়া দলিল প্রমানের ভিত্তিতে নামপত্তন বাতিল করলেও অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টা এর অভিযোগ/তথ্যদাতাকে তার বৈধ জমি থেকে উৎখাতে বিভিন্ন প্রকার হয়রানীমূলক ভূমিকা পালন করছে। এমতাবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তথ্যদাতা পুলেন্দু মন্ডল। তিনি এর যথাযথ বিচার দাবীতে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ প্রার্থনা করছেন।
এবিষয়ে বর্তমান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনিন্দ্য মন্ডল বলেন, যখন ভূয়া দলিল প্রমান ও নামপত্তন বাতিল করা হয়েছিলো, তখন একই সাথে ওই ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ ছিলো।