করিমগঞ্জে ৪০০ বছরের পুকুর রক্ষার দাবিতে ফুঁসে ওঠেছে পরিবেশবাদীরা। জানা গেছে। সোমবার পুকুরভরাটে জড়িত প্রভাবশালী চক্রের বিচার দাবি ও পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও পরিবেশ রক্ষা মঞ্চ (পরম) নামে দুটি সংগঠন। মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন সুলতানার কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের জগৎসাহাবাড়ির কাছে চার শ বছরের পুরোনো একটি পুকুর ভরাটের প্রতিবাদ করে আসছিল স্থানীয়রা। মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরমের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শরীফ সাদী, বাপা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আবুল হায়াত রনি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদ প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ৮২ শতক আয়তনের পুকুরটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর পানির প্রয়োজন মিটিয়ে আসছিল। কিন্তু পুকুরের মালিক নূরুল ইসলাম স্থানীয় আরো কয়েকজনকে নিয়ে গত এক সপ্তাহ আগে ভরাট করা শুরু করে। এলাকার লোকজন এর প্রতিবাদ করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। অভিযোগ পেয়ে গত ২৮ নভেম্বর করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার ঘটনাস্থলে গিয়ে ভরাটের কাজ বন্ধ করে যন্ত্রপাতি জব্দ করেন। তারপরও মালিক ও তার লোকজন ভরাটের কাজ অব্যাহত রাখায় এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়। ৪০০ বছরের পুরোনো এই পুকুরটি ভরাট হয়ে গেলে এলাকার লোকজন সমস্যায় পড়বে। আশপাশে কোনো পুকুর না থাকায় গোসলসহ দৈনন্দিন পানির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে না।
পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটি বাপার কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন,পুকুরটিকে ভরাট করে ফেলায় পরিবেশের জন্য বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। জলাবদ্ধতা সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়বে। তাই সরকারী ও ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরগুলো রক্ষায় আশু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন বর্তমান জলাধার আইনে ব্যক্তিগত পুকুর ভরাটও নিষিদ্ধ। পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলেও সরকারের কাছে আবেদন করতে হয়। সরকার শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি দিলে মালিক পুকুরে মাটি ভরাট করতে পারে। কিন্তু বিদ্যমান আইনের তোয়াক্কা না করে এরইমধ্যে অর্ধেক পুকুর ভরাট করে ফেলেছেন তিনি।
জাফরাবাদ এলাকার বাসিন্দা তানভির আহমেদ জানান, তারা এ বিষয়ে পরিবেশ আধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগও করেছেন।
করিমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন সুলতানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জলাধার আইনে পুকুর ভারাটের কোনো সুযোগ নেই। এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও ভরাট করা যাবে না। পুকুর ভরাটের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার মেশিন ও পুকুর ভরাট সামগ্রী নিয়ে এসেছি এবং পুকুর ভরাটের জন্য নিষেধ করেছি। ফলে পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ রয়েছে।
পুকুরের মালিক নূরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
সূত্রমতে, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক আদেশে বলা হয়,প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নি নির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল, বিল,পুকুর- নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না। জনস্বার্থে এর ব্যতিক্রম করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া নিজের মালিকানাধীন পুকুরও ভরাট করা যাবে না।