জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের ন্যয় রাজশাহীতেও নড়েচড়ে বসেছে আওয়ামী লীগ। দলের প্রকৃত ত্যাগী নেতারা আসন্ন কমিটিতে প্রাধান্য পেতে শুরু করেছেন লবিং গ্রুপিং। আসন্ন কমিটিতে জায়গা পেতে দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে খুশি করতে বিভিন্ন কৌঁসুলি হচ্ছেন। আর তাদের মূল্যায়নের জন্য এরইমধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা হচ্ছে। যেন আসন্ন সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের পরিচালনা কমিটিতে স্থান না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এজন্য বিভাগভিত্তিক তালিকা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে ইতিমধ্যেই রাজশাহী বিভাগে মোট ১ হাজার ২০৫ জন অনুপ্রবেশকারীর তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৯ জন, মহানগরে ২৭ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১২১ জন, নওগাঁয় ৫৯ জন, নাটোরে ১০৪ জন, বগুড়ায় ১২৬ জন, সিরাজগঞ্জে ১১ জন, পাবনায় ৫৯ জন ও জয়পুরহাট জেলায় ৭৪৮ জন রয়েছেন। আগামী ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভা থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। একই সাথে আসন্ন কমিটিতে চমক আসছে দাবি দলের শীর্ষ নেতাদের। যা জানতে আর মাত্র কয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলেছেন তাঁরা।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও নিজস্ব টিমের তত্ত্বাবধানে দলে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন খোদ দলীয় সভাপতি (প্রধানমন্ত্রী)। তালিকা তৈরি করতে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস থেকে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে এসব তালিকা সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আর বিভাগ ও জেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের ওই তালিকায় থাকা অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
অনুপ্রবেশকারীর তালিকা সূত্র অনুযায়ী রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) বর্তমান পরিষদের একাধিক কাউন্সিলরও রয়েছেন। এছাড়াও রাজশাহী মহানগর কমিটিসহ বিভাগের স্ব স্ব এলাকা থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সদস্যসহ দলের স্থানীয় পরিচালনা কমিটির মত গুরুত্বপূর্ন পদেও স্থান পেয়েছেন। যারা বিএনপি-জামায়াত ও জাসদ থেকে দল পাল্টিয়ে আওয়ামী ঢুকেছেন।
গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসন্ন সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেমন নেতৃত্ব চাচ্ছেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে তেমন একটা নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে। একটা চমৎকার নেতৃত্ব বেরিয়ে আসলেই এই সম্মেলন সফল হবে। আমি আশা করছি, আগামীতে রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ একে অপরের পাশেপাশে থেকে বাংলাদেশের মধ্যে উদাহরণ হবে।’
সভায় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল করতে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সম্মেলন প্রস্তুতি সকল উপ-কমিটিকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সভায় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যবৃন্দ, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুপ্রবেশকারীদের তালিকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেটাই। তারা এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড থেকে তালিকা পাননি। কেবল দলীয় কাউন্সিল নিয়ে চিঠি পেয়েছেন। ওই চিঠিতে গঠনতন্ত্রের আলোকে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা রয়েছে। জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে যেন কোনোভাবেই অনুপ্রবেশকারীরা আসতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া দলের মধ্যে থাকা বিতর্কিতদের ব্যাপারেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছেন, ‘দেশ ও দলের প্রয়োজনে একটা সময় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা হচ্ছিল। এই সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দল থেকে অনেকেই আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের আওয়ামী লীগে কোনো স্থান নেই। কারণ তাদের জন্য বদনাম হচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের ঝেটিয়ে বিদায় করা হবে।