রাবেয়ার বয়স মাত্র এক বছর দশ মাস। জন্মের পরপরই বাবা শরিফুল মোল্লার সঙ্গে মায়ের কোলে চড়ে চলে গিয়েছিল ভারতে। সেই থেকেই বাবা মায়ের সঙ্গে বসবাস করতো মুম্বাই শহরে।
শনিবার ভোরে কাঁটাতারবিহীন মাটিলা সীমান্ত পার হয়ে বাবা শরিফুল মোল্লার কোলে চড়ে রাবেয়া বাংলাদেশে চলে আসে। কিন্তু বিএসএফের তাড়া খেয়ে মা আর ঢুকতে পারেননি বাংলাদেশে; থেকে গেছেন ভারতে। এরপর বাবার কোলে থাকাবস্থায় শিশুটি চলে যায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- ৫৮ বিজিবির হেফাজতে। শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহের মহেশপুর থানা পুলিশের মাধ্যমে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
বিজিবির গাড়িতে চড়ে অন্যান্যের সঙ্গে মহেশপুর থানায় আসার পর প্রানবন্ত দেখা যায় শিশু রাবেয়াকে। থানা চত্বর মাতিয়ে রাখে ফুটফুটে শিশুটি। সে এখনো জানে না, তার মা এদেশে নেই। মানুষের তৈরি সীমান্ত আর কাঁটাতারের বেড়া তাদের দুই ভূখ-ে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।শিশু রাবেয়াদের বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার সাতরাখালি গ্রামে। প্রায় ১৮ মাস আগে তারা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে গিয়েছিল কাজের জন্য। এই দাবি করছেন রাবেয়ার বাবা।সম্প্রতি ভারত সরকার সেদেশের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রবেশ করে। অন্যান্য রাজ্যেও এনআরসি করা হবে বলে হুংকার দিচ্ছে শাসক দল বিজেপি। এরপর নির্যাতনের ভয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অনেক মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে বিজিবি ও জেলা প্রশাসন।অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি করছে বিজিবি। চলতি মাসে এই সীমান্ত দিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ঢোকার সময় ২৪৩ জনকে আটক করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা।
রাবেয়ার বাবা শরিফুল মোল্লা বলেন, ‘‘ভারতে গিয়েছিলাম কাজের জন্য। সেখানে মুম্বাইয়ের হোটেলে কাজ করতাম আমি ও আমার স্ত্রী। বেশ কিছুদিন আমাদের কাজের টাকা দেয় না মালিক। নানাভাবে নির্যাতন করতো। পাশাপাশি বিজেপির লোকজন এসে ভয় দেখাতো। মালিকরাও বলতো, ‘তোমরা বাংলাদেশে চলে যাও।’ এজন্য ভয়ে, টাকা পয়সা না পেয়ে আমরা বিনা পাসপোর্টে চলে এসেছি। কিন্তু আমার স্ত্রী সীমান্ত পার হতে পারেনি। জানি না সে কবে আসবে বা আদৌ আসতে পারবে কি-না।’’
ঝিনাইদহ ৫৮ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল আহসান জানান, অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে আসা লোকদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনে মামলার পর আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।