“ভাই কী আর কোনদিন ফিরবে না। ভাই কী বেঁচে আছেন নাকি তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে, দীর্ঘ নয়টি বছরেও তার কোন তথ্য দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভাইকে সাদাপোশাকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করেও কোন সুফল পাইনি। উল্টো মামলার আসামিরা আমার উপর হামলা চালিয়েছে। সে ঘটনারও কোন বিচার পাইনি।
আজো মনে হয় এই বুঝি ভাই বাড়িতে ফিরে আসছে। ভাইয়ের সন্ধ্যানের আশায় আমরা অসহায় পরিবার মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। রোববার সকালে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে জনকণ্ঠর এ প্রতিনিধির কাছে কথাগুলো বলছিলেন-বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের একাধিকবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান (নিখোঁজ) হুমায়ুন কবির খানের সহদর আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ মঞ্জু খান।
সূত্রমতে, ২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ডায়না হোটেল সংলগ্ন এলাকা থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা উজিরপুরের হারতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। ওইসময় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে যোগাযোগের পর তারা হুমায়ুন খানকে তুলে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। পরবর্তীতে নিখোঁজ ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন খানের ছোট ভাই মঞ্জু খান রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন (যার নং-৯৯৪)।
সূত্রে আরও জানা গেছে, হুমায়ুন খান নিখোঁজ হবার মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ঢাকার বাউরা নুরের চাঁন এলাকায় তার (হুমায়ুন) মালিকানাধীন প্রায় একশ’ কোটি টাকা মূল্যের ৭৫ শতক জমি দখল করে নেয় মালিবাগ ৯৬/১ চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা জনৈক সালমা বেগম। প্রথমে হুমায়ুনের পরিবারের দাবি ছিলো-গুমের পেছনে সালমা বেগম ও তার বান্ধবী কবরী দায়ী থাকতে পারে। ফলশ্রুতিতে মঞ্জু খান বাদি হয়ে ওই বছরেই সালমা বেগম, আবদুস সামাদ, মিন্টু, জুলহাস, জুলমাত, সাব্বিরসহ ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে হুমায়ূন খান নিখোঁজ হবার পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও হঠাৎ একদিন ফোনটি খোলা পায় মঞ্জু খান। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে খুলনা থেকে বিপুল দাস নামের একজনকে হুমায়ুনের মোবাইল ফোনসহ গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তাকে পরবর্তীতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মঞ্জু খান।
এর পর মঞ্জু খান ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর একই থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন (যার নং ২৪/৫৩১)। ওই মামলায় তৎকালীন উজিরপুরের ওটরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পরবর্তীতে উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবালকে প্রধান আসামি করা হয়। চাঞ্চল্যকর মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তাধীন।
প্রকাশ্যে সাদাপোশাকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার নয় বছরেও নিখোঁজ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানকে খুঁজে বের করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হারতা ইউনিয়নবাসী আজো তার জন্য প্রকাশ্যে কাঁদেন। হাজারো মানুষের প্রশ্ন হুমায়ুন খানের গুমের আসল রহস্য নিয়ে। হুমায়ুনের পরিবারের অপেক্ষা হয়তো একদিন পরিবারের কাছে ফিরে আসবেন তিনি!
হুমায়ুন কবির খানের ছোট ভাই মামলার বাদি আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু খান অভিযোগ করে বলেন, তৎকালীন ওটরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল তার নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে আমার ভাই হুমায়ুন খানকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করেছে। আর এ অভিযোগ এনে তার (ইকবাল) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় আমাকে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইকবালের সহযোগিরা প্রকাশ্যে উজিরপুর উপজেলার ডাকবাংলোর সামনে বসে আমার (মঞ্জু খান) ওপর হামলাও চালিয়েছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন খানের নিখোঁজের নয় বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত তার অসহায় পরিবার ও স্বজনরা জানেন না তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কী জুটেছে। সে জীবিত আছে নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে? তাই তারা নিখোঁজ হুমায়ুন কবির খানের সন্ধান পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।