নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ রোর্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজশাহীর দফতরে উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহনের রেজিষ্ট্রেশনসহ বিভিন্ন কাজে এসে ফিটনেস প্রত্যাশীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আর এই চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে নাস্তানাবুদ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। সেবা নিতে এসে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে সেবাপ্রার্থীরা। বিআরটিএ অফিস ঘিরে থাকা দুই শতাধিক দালালদেরও শুরু হয়েছে রমরমা ব্যবসা। সুযোগ বুঝে তারাও কাজের ফি বাড়িয়েছে কয়েকগুন।
বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে আগের থেকে প্রায় দশগুন বেশি আবেদন জমা পড়ছে। আগে প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিনশটি আবেদন পড়লেও এখন তা বেড়ে প্রায় তিন হাজারের মত পড়ছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া কিংবা যানবাহনের কাগজপত্র নবায়ন করতে হঠাৎই বেড়েছে আবেদনের হিড়িক। সড়ক পরিবহনের নতুন আইন কার্যকরে প্রশাসনের বাড়তি নজরদারীর কারণে দীর্ঘদিন পর আলস্য ভেঙ্গে এসেছেন এসব সেবাপ্রত্যাশিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বিআরটিএতেই ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশিদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। দফতরের প্রতিটি কাউন্টারেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন হাজারও সেবাপ্রত্যাশি। রাজশাহীর বিআরটিএ দফতরে যেন পা ফেলার জায়গা নেই। তবে অনেকেই লম্বা লাইনে দাড়ানোর ভোগান্তি থেকে বাঁচতে দালালদের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন।
বিআরটিএ রাজশাহী কার্যালয়ে লাইসেন্স করতে পুঠিয়া উপজেলার আসা দক্ষিন কোরিয়া প্রবাসী হাবিব বলেন, ‘দুই মাসের ছুটিতে এসেছি। এসে দেখি আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আবার জানলাম, নতুন আইনে জরিমানার পরিমান বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই জরিমানা দেওয়ার চেয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করাই ভালো। কিন্তু এখানে এসে দেখছি, দালালদের সহায়তা ছাড়া কোন কাজই নিয়মাফিকভাবে সহসায় একদিনে করা সম্ভব নয়। আর দালালরাও এই নতুন আইন কার্যকরের সুযোগী ভিড়ে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নিল। আমিও ভোগান্তির কবল থেকে বাঁচতে দিতে বাধ্য হলাম।’
মালিকানা হস্তান্তর করতে আসা নাটোরের বাগাতিপাড়া এলাকার মোস্তাফিজ বললেন, নতুন আইন কার্যকরের কারণে সড়কের ঝামেলা এড়াতে ভিড় বেড়েছে বিআরটিএ অফিসে। সময়ও লাগছে অনেক। আর এই সুজগে বিআরটিএ অফিসের দালালরা যেন মগের মুল্লুক পেয়েছেন। অধিক টাকা ছাড়া কেউ কোন কথা-ই বলছেন না। সড়কে যেমন সার্জেন্টরা কঠোর ভুমিকা পালন করছেন তেমনি বিআরটিএ অফিসেও দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়ে অভিযান পরিচালনা করা দরকার।’
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী বিআরটিএ দফতরের সহকারী পরিচালক এস এম কামরুল হাসান বলেন, ‘নতুন সড়ক আইন কার্যকরের কারণে আগের থেকে প্রায় দশগুন সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু আমাদের লোকবল বাড়েনি। দীর্ঘদিন থেকে লোকবল সঙ্কট রয়েছে। কিন্তু সমাধানের কোন উদ্যোগ নেই। আর এখন বাড়তি চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি। দক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।’
দালালদের বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ত্রিশ সেবাপ্রত্যাশীর সেবা প্রতিদিন দেওয়া সম্ভব। যার বিপরীতে আবেদন পড়ছে প্রায় তিন হাজারের মত। আমাদের বর্তমান জনবল দিয়ে প্রতিদিন তিনশ সেবাপ্রত্যাশীকেও সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু এখন এই জনবল দিয়ে তিন হাজার ব্যক্তিকে কীভাবে সেবা দিব! যে কারণেই দালালরা এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে। আগে দক্ষ জনবল নিয়োগের জন্য আপনারা অবদান রাখেন, এরপর সফল হলে দালালমুক্ত দফতর উপহার পাবেন।