যারাই রক্ষক তারাই ভক্ষক। ভোলাহাট উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে রিলিফের টাকা হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার দেশকে যখন বিভিন্ন প্রকল্প দিয়ে উন্নয়নের চিন্তা করছেন ঠিক এমন সময় সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছেন সরকারের কর্মকর্তারাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নিজ দলের দূর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী দলের ভিতর শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও শুদ্ধি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন। ঠিক এমন সময়ে ভোলাহাট উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও স্বয়ং ইউএনও’র যোগসাযোসে ভূয়া নাম ঠিকানায় প্রকল্প দিয়ে হরিলুট হয়ে যাচ্ছে রিলেফের টাকা। সদ্য বিদায়ী ইউএনও মাহমুদা পারভিন ও তৎকালিন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আল মামুন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের যোগসাযোসে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে হাজার হাজার রিলিফের টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পর পর দুইবারধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ও অফিসার্স ক্লাবের নামে ভূয়া নাম ঠিকানায় রহস্যজনক ভাবে প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের উন্নয়ন প্রকল্প নং সাধারণ/১ম/০৯ বরাদ্দ হয় ৮৪ হাজার ৮শত টাকা। এ প্রকল্প অনুমোদন হয় ১১ ফের্রুয়ারী/১৯। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষণ(টি.আর) কর্মসূচীর প্রকল্প নং ২য় ০৯ উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের সিলিং প্লাস্টার ও রং করণে ৯৮ হাজার টাকার প্রকল্প জুনের ১০ তারিখ অনুমোদন করা হয়। অপরদিকে একই সময় উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের উন্নয়ন কাজ প্রকল্প নং-১ম/সাধা/০১ অর্থ বছর ২০১৮-১৯ অর্থ বরাদ্দ ৫২ হাজার ৩শত টাকা ও একই অর্থ বছরে প্রকল্প নং ২য় ০৮ উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের আসবাবপত্র ক্রয় দেখিয়ে বরাদ্দ দেখানো হয় ৫৫ হাজার টাকা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির তালিকায় যাদের সদস্য দেখানো হয়েছে তাদের নাম ঠিকানায় চরম অসঙ্গতি রয়েছে। ভূয়া ৪টি প্রকল্পে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে যাদের সদস্য দেখানো হয়েছে তাদের নাম ঠিকানায় অধিকাংশ সদস্যর ঠিকানা অনুযায়ী তাদের হদিস মেলেনি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির ঠিকানানুযায়ী খোঁজ-খবর নিলে ঐ নামের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে যাদের সভাপতি করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন মসজিদের মোয়াজ্জেম অপর ২জন উপজেলা প্রশাসনের ২টি অফিসের মাষ্টার রোলে কর্মরত। এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির তালিকায় নাম ঠিকানা উল্লেখ না থাকলেও স্বাক্ষরের স্থানে গায়েবি ভাবে স্বাক্ষর ও ভূয়া নাম ঠিকানায় প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অপরদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও তাদের পিপি সাইজ ছবি নেয়া হয়। কিন্তু এসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে এসব নিয়মও মানা হয়নি। প্রকল্প সভাপতিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্প কমিটির তালিকায় তাদের স্বাক্ষর নেয়া হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কে বা কারা করেছেন বা বাস্তবায়ন হয়েছে কি না তা তারা জানেন না বলে জানান। এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ প্রকল্প ছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানের নামে পূর্বে একাধিক বার উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দের নামে সরকারী রিলেফের টাকা হরি লুট হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) আরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ যথাযথ নিয়ম মেনেই সম্পন্ন হয়েছে। একই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল আলমের সাথে যোগাযোগ করে প্রকল্পটি নিয়মানুযায়ী বাস্তবায়ন হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি বলে স্বীকার করেন। ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানলাম তাতে প্রকল্পে অস্বচ্ছতা রয়েছে। এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। অপরদিকে বিদায়ী ইউএনও মাহমুদা পারভীনের বিরুদ্ধে এলজিইডির বানোয়াট কোটেশন টেন্ডারসহ নানা অভিযোগ তুলে ১৮ সেপ্টেম্বর ভোলাহাট উপজেলার সরকার দলের স্থানীয় আলীগ শাখার উপজেলা সভাপতিসহ সহযোগি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ ২৫জন নেতার স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর প্রতিকার চেয়ে প্রদান করা হয়। অভিযোগপত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আলীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য মইনুদ্দিন মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ, ভোলাহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আলীগ উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।