রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ অধিকাংশ সময়েই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। আর শীর্ষ কর্মকর্তাগণ কর্মস্থলে না থাকার সুযোগে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর জুনিয়র কর্মকর্তাসহ কর্মচারীরাও কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। ফলে এসব দফতরে আসা সেবাপ্রার্থীরা প্রতিনিয়তই হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবেই এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন অযুহাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন। বুধবার (২০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
এসময় অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান ১৫ দিনের ছুটিতে ভারতে অবস্থান করছেন। আর উপজেলা হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা কর্মকর্তা, সমবায় কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে কী কারণে উপজেলার পর্যায়ের এসব শীর্ষ কর্মকর্ত অনুপস্থিত ছিলেন তা জানা যায়নি। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৩ কর্মকর্তার মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন ৮ জন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, এ চিত্র শুধু আজকের (বুধবার) নয়, দীর্ঘদিন থেকেই হয়রানী হচ্ছে তারা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবেই এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন অযুহাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন বলেও অভিমত ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীদের।
উপজেলা ভূমি অফিসে আসা সেবাপ্রার্থী ইউসুফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গরীবের বাপ-মা নাই ভাই, যেদিনই কাজে আসি, সেদিনই স্যারেরা থাকেন না। দিন আনি দিন খাই ভাই। একদিন ঘুরে যাওয়া মানে সেদিনের ইনকাম বন্ধ। আর একদিনের ইনকাম বন্ধ থাকলে সেই ঘাটতি পূরণ করতে এক সপ্তাহ খাটা লাগে ভাই। আমাদের কষ্ট কেউ বুঝেনা-রে ভাই।’ এ সময় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সরকারের এসব ডিজিটাল দূর্নীতি কারো চোঁখে পড়েনা-রে ভাই। যে কারণেই গরীবরা আজীবন গরীব-ই থেকে যাবে। আর বড় লোকেরা আরো বড়লোক হবে।’
এদিকে প্রায় প্রতিদিনই একই অবস্থা বিরাজ করার কারণে জনভোগান্তি বাড়ছে। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সরকারি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। যে কারণেই তারা সময়মত সঠিক সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ভূমি কর্মকর্তা) রুমানা আফরোজ বলেন, ‘ইউএনও স্যার ছুটিতে থাকায় আমি দায়িত্বে রয়েছি। তবে কেন বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তাগণ অনুপস্থিত রয়েছেন তা আমার জানা নাই। এখন জানলাম, খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাজমা আখতার কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিতির সংখ্যা ছিল অনেক বেশী। জানা গেছে, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ২৮ জন চিকিৎসকের স্থলে বর্তমানে রয়েছেন ১৩ জন। যার মধ্যে বুধবার কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৫ জন। তবে এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাজমা আখতারের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কর্মকর্তাগণ অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কর্মচারীরা বলেন, স্যার অফিসের কাজে বাইরে আছেন। এর বেশী কিছু জানিনা।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম হীরা বাচ্চু বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছুটিতে দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। আর অন্যান্য দফতরের কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন জানলাম, অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হবে। এতে কোন গড়মিল তথ্য পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’