রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, সিগন্যাল অমান্য করায় ট্রেনের এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য আন্তঃনগর ৭৪১ নম্বর তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক), সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ড দায়ী। কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে জানান মন্ত্রী।
বুধবার রেলভবনে কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও ব্রিফিংয়ে তিনি এ সব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, রেলের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান প্রমুখ।
রেলমন্ত্রী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মোট পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি কমিটির প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তঃনগর ৭৪১ নম্বর তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ড সিগন্যালগুলো যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ না করে ট্রেন পরিচালনার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও জানান, সিগন্যাল অমান্য করায় সংঘটিত এ দুর্ঘটনার জন্য কমিটিগুলো কর্তৃক তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমাস্টার তাছের উদ্দিন, সহকারী লোকোমাস্টার অপু দে এবং গার্ড মো. আব্দুর রহমানকে দায়ী করা হয়।
এ তিনজনের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। আমরা রিপোর্ট পেয়েছি, এখন তাদেরকে প্রশাসনিকভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এরপর প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি হবে। তাদেরকে শোকজ করবে, এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা তাদের বিচার করে করে প্রশাসনিক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কুয়শার শঙ্কা করছিলাম, কিন্তু তদন্ত রিপোর্টে সেটা আসেনি। ট্রেনে অন্যান্যরা এবং স্টেশন মাস্টার বলছেন কুয়াশা ছিল না। তারা (লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ড) যে অজুহাতগুলো দেখিয়েছিল সেগুলো ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট বলছে, তাদের অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। জরুরি ব্রেক করলে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই একটা ট্রেন থামানো সম্ভব। কিন্তু তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
উনারা কি ঘুমিয়ে পড়েছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা তদন্তে প্রতিবেদনে ঘুমিয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ পায়নি। কারণ ট্রেনটি ৭০ কিলোমিটার বেগে চলছিল। কিন্তু ট্রেনটি যখন ধাক্কা মারে তখন তার গতি ছিল ২৫ কিলোমিটার।
অপর এক রেলের মহাপরিচালক বলেন, সার্বিকভাবে লোকোমাস্টার সংখ্যা কম রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে লোকোমাস্টারের অভিজ্ঞতা কম ছিল না। আমি ব্যক্তিগতভাবেও খোঁজ নিয়েছি, তার নেশা জাতীয় তেমন কোনো খারাপ অভ্যাসও ছিল না।
মন্ত্রী বলেন, যদি এখানে দুটি লাইন হতো তাহলে এ দুর্ঘটনাটা ঘটতো না। কিন্তু আমরা ট্রেন লাইনগুলো ডাবল লাইন করতে পারিনি।
ব্রিটিশ আমলের আইন অনুযায়ী, একজন লোকোমাস্টার রেল অ্যাক্সিডেন্ট করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরি থেকে অভ্যাহতি তারপরও এ ক্ষেত্রে আইনটি প্রয়োগ করে একজনকেও শাস্তি দেয়া হয়নি। এখন সড়ক আইন সংস্কার হয়েছে আপনারা কি এ আইনটির সংস্কার করবেন এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আইন সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান আইনেও অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করার সুযোগ নেই। এটা তার কাজে অবহেলার দায়ে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা জানেন গত সোমবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আমরা আগে জানিয়েছিলাম এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু একজনের নাম দুইবার চলে এসেছিল। আসলে তখন নিহত হয়েছিল ১৫ জন। এরপর আরও দুই জন মারা যাওয়ায় এ ঘটনায় সর্বমোট ১৭ জন নিহত হয়েছে।