বগুড়ায় লালমিয়া নামের এক হত দরিদ্র রিক্সা চালকের শততা এবং এক পুলিশ কর্মকর্তার কর্তব্যপরায়নতা কারণে রাজীব প্রসাদ নামের ব্যবসায়ী তার খোয়া যাওয়া ১৯ লক্ষ টাকা ফেরত পেয়েছেন। এমন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের ঘটনা ঘটেছে গত কাল শুক্রবার সকালে বগুড়া শহরের প্রান কেন্দ্র সাতমাথায় এলাকায়।
জানা গেছে, বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলার রনবাঘা এলাকার দিনানাথ প্রসাদের ছেলে ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ রনবাঘা বাজারে রাসায়নিক সারের ব্যবসা করেন এবং ছেলে মেয়েদের লিখাপড়া করার জন্য সপরিবারে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
গতকাল সকালে সার ব্যবসায়ী রাজীব প্রসাদ শহরের জ¦লেশ্বরীতলার ভাড়া বাসা থেকে রনবাঘা এলাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় তিনি সঙ্গে ৩টি ব্যাগ নিয়ে একটি রিকশাযোগে শহরের সাতমাথায় আসেন। তার ৩টি ব্যগের মধ্য ১টি ব্যাগে আগের দিন ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত প্রায় ১৯ লাখ টাকা বহন করছিলেন। তারাহুরা করে বাস ধরার জন্য তিনি ভুল বশত রিকশাতেই ফেলে যান টাকাভর্তি ব্যাগটি।
এরপর তিনি গাড়ীতে উঠে বিষয়টি টের পেরে সাতমাথায় রিকশাচালককে খুঁজেন। কিন্তু খোজা খুজির পরও রিক্সাওয়ালাকে না পেয়ে তিনি বগুড়া সদর থানায় বিষয়টি অবহিত করেন।
অপরদিকে রিকশাচালক প্যাসেঞ্জারের ফেলে যাওয়া ব্যাগটি দেখে এর মালিককে খুঁজে পেতে ব্যার্থ হন। ব্যাগের ভেতর বিপুল পরিমান টাকা দেখে হতষম্ব হয়ে পড়ে সে। এ সময় তার ভেতর ভীতির সঞ্চার হয়। পরে রিক্সাচালক লাল মিয়া শহরের খান্দার এলাকায় তার ভাড়া বাড়ীতে যান। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে আবারো বের হন টাকার মালিকের খোজে।
এদিকে ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদের অভিযোগ পেয়ে থানার কর্তব্যরত ডিউটি কর্মকর্তা রোজিনা বিষয়টি থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ( ওসি সার্বিক) এমএম বদিউজ্জামানকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে ওসির নির্দেশে কর্তব্যরত নবীন পুলিশ কর্মকর্তা এসআই জহুরুল টাকা ভর্তি ব্যাগ বহনকারী রিক্সা চালকের খোজে নিজেকে আত্ব নিয়োগ করে। এ সময় সে বিভিন্ন সিসি ফুটেক দেখে ওই রিকসা চালকের সন্ধান করতে থাকেন। এর একপর্যায়ে এসআই জহুরুল ৪ঘন্টা অবিরাম প্রচেষ্টার পর অন্যান্য রিকশাচালকদের সহায়তায় ওই রিক্সা চালককে সনাক্ত করতে সক্ষম হন। পরে তিনি খান্দার এলাকায় রিক্সা চালক লালমিয়ার বাড়ীতে পৌছান। এ সময় রিক্সা চালক লাল মিয়া শহরের মাইকিং করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রিক্সা চালক লাল মিয়া লাল মিয়া বিষয়টি স্বীকার করেন জানান টাকার ব্যাগ তার হেফাজতেই আছে। পরে টাকার ব্যাগটি তিনি পুলিশ কর্মকর্তা জহুরুলের নিকট হস্তান্তর করেন।
এসআই জহুরুল উদ্ধারকৃত সমুদয় টাকা বগুড়া পুলিশ সুপারের কাছে জমা করেন। পুলিশ সুপার মুহা আশরাফ আরী ভুঞাঁ বিপিএম (বার) এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উদ্ধারকৃত টাকা ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদের হাতে তুলে দেন। একই সাথে পুলিশ সুপার মহানুববতার জন্য রিক্সা চালককে একটি রিক্সা কিনে দেবার অনুরোধ করেন।
ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ এ সময় পুলিশ সুপার ও রিক্সা চালকের কাছে কৃতজ্ঞ প্রকাশ করে জানান আগামী রোববার তিনি রিকশা চালককে একটি নতুন রিক্সা ও একটি মোবাইল ফোন উপহার হিসাবে পুলিশের মাধ্যমে লাল মিয়াকে দেবেন।
সদর থানার এস আই জহুরুল ইসলাম জানান, আজো সমাজে মানুষ অনেক মাহনুভবতার পরিচয় দেন, লাল মিয়া তাদেরই একজন। পরে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা তার কার্যালয়ে রাজীব প্রসাদের হাতে তার হারানো প্রায় ২০ লাখ টাকা তুলে দেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( শেরপুর-ধনুট সার্কেল)মুহা গাজীউর রহমান ,বরুড়া সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (সার্বিক) এসএম বদিউজ্জামান সহ বিভিন্ন পদবীর পুলিশ সদস্যগন।
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, রিকশাচালকের সততা ছিল বলেই টাকা ফেরতের জন্য সে আগ্রহী ছিল। ইচ্ছে করলে তিনি টাকা নিয়ে চলে যেতে পারতেন। তিনি তা করেননি। জেলা পুলিশ ঋউঢঈউ জানান, টাকা হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করার একপর্যায়ে বেলা ১১ টার সময় টাকাগুলো উদ্ধার করার পর মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। টাকার মালিক রাজীব প্রসাদ জানান, তিনি টাকাগুলো রোববার সকালে সার কেনার জন্য পাঠাতেন। সেই কারণে বৃহস্পতিবার ব্যাংক থেকে টাকাগুলো উত্তোলন করেছিলেন। টাকা ফেরত পেয়ে খুশি হয়ে নতুন রিকশা কেনার জন্য চালককে ৫০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোনের টাকা দিয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে লাল মিয়াকে পুরস্কৃত করেন। আগামী রোববার পুরস্কারের টাকা দিয়ে লালমিয়াকে একটি নতুন রিক্সা কিনে দেয়া হবে বিষয়টি জানান সদরের কর্মকর্তা ইনচার্জ বদিউজ্জামান।