অধিকাংশ ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে সুদৃঢ় বর্ম হয়ে এই অঞ্চলকে রক্ষায় সুন্দরবনের অবদান অনস্বীকার্য। নিশ্চিদ্র সুরক্ষায় বেষ্টনী হয়ে ৬ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবন বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল বাংলাদেশের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষা করে আসছে।
সুন্দরবনের কারণেই সর্বশেষ প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের শক্তি কমেছে এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কম হয়েছে। যা আবহাওয়া অধিদফতরসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট মহল থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর আগেও প্রলয়ংকরী সিডর, আইলাসহ আরও বহু মহাদুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপকতর হতে দেয়নি প্রকৃতির এই অপার সৃষ্টি। শুধু দুর্যোগ থেকে রক্ষায় নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবেই নয়, সুন্দরবন এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র, ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম রক্ষাকবচ। তাই দেশের স্বার্থেই সুন্দবরবন রক্ষায় অবিলম্বে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে এটিকে ঝুঁকির মুখে ফেলা রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এবং সুন্দরবনকে ঘিরে যে পরিবেশবিনাশী শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সুন্দরবনকে ধংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে কিনা সেটি আবারও ভাবার সময় এসেছে। বৈশ্বিক, স্থানীয় উদ্বেগ ও পরামর্শ উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও কৌশলগত পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই সুন্দরবনের কাছে রামপাল, তালতলি ও কলাপাড়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ যেসব বহুমুখী ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেগুলো সম্পর্কে আরও গভীর পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রায়েছে।
জীববৈচিত্রের সঙ্গে বনের ভারসাম্য ও স্বাভাবিক বিকাশ সম্পর্কযুক্ত। তাই সুন্দরবন থেকে চোরাইভাবে গাছকাটা ও বন্যপ্রাণি শিকার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ব্যাপারে নজরদারি ও আইনপ্রয়োগের প্রক্রিয়া জোরদার করার পাশাপাশি সচেতনাতা বৃদ্ধি করতে হবে। বনের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় মানুষদের বনে প্রবেশ কমানো গেলে সুন্দরবনের ক্ষতি কম হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করা যাবে না। তবে বনের উপর নির্ভরশীল মানুষদের বিকল্প কর্মসংস্থান করতে পারলেই তারা সুন্দরবনে আর আসবে না। আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে।