আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজশাহী মহানগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম মহাসড়কের শিরোইল এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বাস টার্মিনাল। এ এলাকায় রেলস্টেশন থাকায় এমনিতেই যানজট লেগে থাকে। উপরন্ত আন্ত:জেলার পাশাপাশি এখানেই রয়েছে ঢাকা ও চট্রোগ্রামগামী বাসের কাউন্টার। ফলে এই এলাকাটি যেন যানজটনের এক অন্যতম হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ এলাকার শিরোইল ও সাগরপাড়া রাস্তাটির দুই পাশেই যত্রতত্রভাবে বাস রাখায় রেলস্টেশনের যাত্রীদের যাতায়াতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়াও দুরপাল্লার বাসগুলো এই রাস্তাতেই ঘোরানোর ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। আর নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিক্সা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারীদের দাপট তো রয়েছেই। এসব কারণেই এই এলাকাতে দুর্ঘটনার সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব দর্শকের ভুমিকায় রয়েছে। ফলে এ এলাকায় চলাচলরতদের মধ্যে ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।
সম্প্রতি মহানগরীতে যানজট কমাতে ও ফুটপাতে পথচারী চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযান চালায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন । সেসময় উচ্ছেদ করা হয় ফুটপাতে থাকা হাজার হাজার দোকান-পাট। কিন্তু সে অভিযানের আওতায় ছিলনা শিরোইল ও সাগরপাড়া রাস্তায় অবৈধভাবে থাকা বাস টার্মিনাল। যে কারণেই নগরবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আর অন্য এলাকার ফুটপাতে থাকা উচ্ছেদকারীদের ভাষ্য, আইনপ্রয়োগকারীদের চোঁখে শুধু আমরাই! কারণ, আমরা গরীব, যে কারণেই আইনের রুলার শুধু আমাদের ওপরই চলে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরীর শিরোইল এলাকায় পুরনো বাস স্টেশনটির বাইরেও রাস্তা দখল করে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানোয় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকাণ্ডচট্রোগ্রাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী বাসগুলো একেবারে রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করায় সবসময়ই এ এলাকায় যানজট লেগেই থাকছে। যা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও।
জানা গেছে, মহাসড়কের যানজট নিরশনে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের মধ্যেই যাত্রীদের ওঠা-নামা করানোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তারাও এই নির্দেশনা মানছেন না। ফলে ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে যানজটের থাবা। যথাসময়ে কর্মক্ষেত্রেও পৌছাতে পারছেন না কর্মজীবীরা।
সূত্র মতে, রাজশাহীতে যানজট নিরসন ও যাত্রীদের উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বড় পরিসরে মহানগরীর নওদাপাড়ায় ২০১১ সালে নতুন বাস টার্মিনালের যাত্রা শুরু হয়। তবে আন্ত:জেলায় চলাচলকারী বাস টার্মিনাল থেকে যায় নগরীল শিরোইল এলাকায়। কিন্তু সেই টার্মিনালটি শুধুই বাস দাঁড়ানোর জন্য যেন গ্যারেজে পরিণত হয়েছে। কারণ, ওই টার্মিনাল থেকে দুরপাল্লার যানবাহনগুলো মধ্যনগরীর মহাসড়ক ব্যবহারে নিষেধাক্কা থাকলেও তা মানা হয়না। ওই টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার যানবাহনগুলো নগরীর ভদ্রা স্মৃতি অম্লান, তালাইমারী মোড়, কাজলা গেট হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনের মহাসড়কই ব্যবহার করছে। আবার প্রবেশকালেও একই রাস্তাসহ নগরীর ভদ্রা স্মৃতি অম্লান হয়ে ব্যস্ততম শিরোইল, রেলস্টেশন ও রেলগেট ঘুরে রাজশাহী-নওগা মহাসড়কের বিজিবি সদর দফতরের সামনে দিয়ে চলাচল করছে। ফলে এসব এলাকার সকল মোড়েই রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানো হচ্ছে। আর যাত্রী পরিবহণগুলোর বিকট শব্দে হর্ণ বাজানোর প্রবণতা তো রয়েছেই। এতে করে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, তেমনি সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে দিনকে দিন।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরীর রেলগেট এলাকায়। রাজশাহী শহরের প্রবেশ দ্বার এই পয়েন্টটির দুই দিকে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী টার্মিনাল। রেলগেট কামারুজ্জামান চত্তরের দক্ষিণ পাশে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে পাশাপাশি দুটি বাসটার্মিনাল। একটি বিআরটিসির। অন্যটি বেসরকারি। মোড়ের উত্তর পাশে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের প্রবেশ দ্বারে রয়েছে আরো তিনটি টার্মিনাল। আবার নগরীর ভদ্রা স্মৃতি অম্লানের পূর্বপাশ দখল করে এবং তালাইমারী মোড়ের উত্তর পাশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে আরো দুটি বাস স্টেশন।
মহানগরীতে যানজটের অন্যতম বাহনখ্যাত অটোরিক্সা চালক নবাব আলী বলেন, ‘রাস্তা দখল করে বাসগুলোর যাত্রী ওঠা নামার কারণেই মূলত যানজট হয়। আমাদের ১০টি অটোরিক্সার জন্য যে জায়গার প্রয়োজন হয় তা একটি বাসেরই লাগে। সে কারণেই যানজট কমছে না।’
মহানগরীর ভদ্রা এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট এক ব্যবসায়ী বলেন, রাজশাহীর ‘পদ্মা আবাসিক’ অভিযাত এলাকা। কিন্তু এই অভিযাত এলাকার প্রধান সড়ক দিয়েই যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। শুধু তাই নয়, রাস্তা দখল করেই অবৈধ বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছে। এই সড়কের দুই পাশের বাসিন্দারা সবসময়ই দূর্ঘটনা আতঙ্কে থাকেন। আর এসব পরিবহণের কারণে রাস্তার দুই পাশের বাসিন্দারা বাড়ির দরজা জানালা খোলা রাখতে পারেনা। এই অভিযাত এলাকার বাসিন্ধারা দূর্ঘটনা আতঙ্কের পাশাপাশি বিকট শব্দের হর্ণ বাজানোর কবলে পড়ে আছে। ফলে শিশু ও বৃদ্ধসহ অসুস্থদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এই রাস্তা দিয়ে যাত্রীবাহী বাস ও বালুবাহী ট্রাকের অবাধ চলাচলে আবাসিকের মানুষ অতিষ্ঠ। এ নিয়ে প্রশাসনের দপ্তরে বার বার লিখিত অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো দিনের পর দিন যেন সমস্যাগুলো স্থায়ী রুপ নিচ্ছে। এতে করে এখানকার বাসিন্দাদের নিরপাত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে একটি অনুষ্ঠানে দেখা মেলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তিনটি দফতরের কর্মকর্তাদের। সে অনুষ্ঠানে থাকা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগণ নাম প্রকাশ না করার সর্তে বলেন, ‘রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা টার্মিনালগুলো নিস্বন্দেহে অবৈধ। কারণ, তাদের এই কর্মযজ্ঞের জন্য প্রশাসনিকভাবে বৈধ কোনো অনুমতি নেই। বাস মালিকদের স্বার্থে পরিবহনের শ্রমিকরা ইচ্ছেমতো কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা জনস্বার্থে কেন আইন প্রয়োগ করছি না, আমাদের এই অপারগতার কথা সবই জানেন, বোঝেন। তারপরেও সংবাদ লেখার স্বার্থে আমাদের নিরব ভুমিকা নিয়ে বক্তব্য চান। আর তখনই আমরা বিব্রতবোধ করি।’ তারা বলেন, ‘আমরা হুকুমের গোলাম, ইচ্ছে করলেই ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারি না।’ এ সময় তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধোতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলারও পরামর্শ দেন।’
এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব উদ্দিন চৌধূরীর সাথে শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের ডেপুটি কমিশনার অনির্বাণ চাকমা শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনের মাধ্যমে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে রাসিক মেয়র মহাদয়ের সাথে কথা হয়েছে। নওদাপাড়ার সেই টার্মিনালটি ব্যবহার করাতে পারলেই মহানগরীর যানজট অর্ধেকের বেশি কমে আসবে। যত দ্রুত সম্ভব এই প্রক্রিয়া চালানো হবে।