চাটমোহর সরকারি কলেজে নিয়মিত ক্লাস না হওয়াসহ অধ্যক্ষের অনুপস্থিতি ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হওয়ার প্রতিবাদ জানাতে মঙ্গলবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘোষনা দেয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন এই কর্মসূচি পালন করতে না পারে,সেজন্য অধ্যক্ষের নির্দেশে কলেজের এক শিক্ষক ও অফিস সহকারী মিলে শিক্ষার্থীদের ডেকে ১১৩ নং কক্ষে নিয়ে ভয়ভীতি দেখায় বলে অভিযোগ। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার কর্মসূচি না করার নির্দেশ দেন। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে অধ্যক্ষ তার অনুসারী শিক্ষার্থীদের দিয়ে মিছিল করারও প্রস্তুতি গ্রহণ করেন বলে জানা যায়। ছাত্রলীগের ব্যানারে একটি মিছিলও বের হয়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) সজিব শাহরীন ও চাটমোহর থানার ওসি সেখ মোঃ নাসীর উদ্দিন কলেজে গিয়ে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। চাটমোহর থানার ওসি সেখ মোঃ নাসীর উদ্দিন বললেন,কলেজের সাধারণ ছাত্ররা আমার কাছে এসেছিলো মানববন্ধন করার অনুমতি নিতে। আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। অধ্যক্ষের কাছে যেতে বলেছি। এরইমধ্যে নাকি এক পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আমি ও সার্কেল স্যার গিয়ে সকলের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি।’
শিক্ষক ও ছাত্ররা অভিযোগ করেন,দীর্ঘদিন ধরেই অধ্যক্ষ কলেজে নিয়মিত আসেন না। মামলা-মোকদ্দমায় তিনি জড়িয়ে পড়েছেন। ক্লাসও ঠিকভাবে হয় না। এ বিষয়গুলো বলতে গেলেই অধ্যক্ষের অনুগত এক অফিস সহকারী ও দু’একজন শিক্ষক তাদেরকে ভয়ভীতি দেখায়। তারা আরো অভিযোগ করেন,অধ্যক্ষের অনুসারীদের মধ্যে বহিরাগতরাও রয়েছে। এসকল কারণে সাধারণ ছাত্ররা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেয়। কিন্তু অধ্যক্ষ তা বানচালের পরিকল্পনা করেন এবং তার অনুসারীদের দিয়ে একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। এনিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রসঙ্গতঃ কলেজটি সরকারিকরণের পর থেকেই শিক্ষকদের পদ সৃজনে আত্তীকরণ নিয়ে অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমারের। এ ছাড়া শিক্ষকদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন অধ্যক্ষ। এনিয়ে থানায় একাধিক সাধারণ ডায়রী হয়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষকরা মাঠে নামেন। বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দায়ের করেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মুল্যবান গাছ বিক্রির অভিযোগে মামলাও দায়ের করা হয়। একাধিক অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। অন্যগুলোর তদন্ত চলমান।
এদিকে অধ্যক্ষ কর্তৃক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অধ্যক্ষ হাইকোর্টেও পৃথক দুটি রীট পিটিশন দায়ের করেছেন।
অধ্যক্ষকে দূর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে তার অপসারণ দাবি করে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তারা অধ্যক্ষ কর্তৃক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মিথ্যে মামলা দায়েরের প্রতিবাদ জানান এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন,কলেজ সরকারিকরণের পর থেকেই অধ্যক্ষ পদসৃজন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করেন। শিক্ষকদের আত্তীকরণ ফাইল নির্ধারিত সময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে না পাঠিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও হয়রানীমূলক পদক্ষেপ নিতে থাকেন। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষকদের নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। তারা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দূর্নীতি,ভুয়া শিক্ষক নিয়োগসহ রকম রকম অভিযোগ তুলে তার অপসারণ দাবি করেন।
ইতোপূর্বে অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানের অপসারণ দাবিতে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী কালো ব্যাজ ধারণ,মৌন মিছিল,অবস্থান কর্মসূচী,পোস্টারিং করা,লিফলেট বিতরণ,মানববন্ধন,ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। এসকল কারণে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যান অধ্যক্ষ-শিক্ষক। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তুলে ধরেন। কিন্তু আজ অবধি সৃষ্ট জটিলতা বা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বরং একের পর এক মামলা-মোকদ্দমায় কলেজের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন,কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ সৃজনের ফাইল গত ০৭.০৫.১৯ ইং তারিখে মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা অধিদপ্তরে শেষ দিন হলেও আজ পর্যন্ত তা পৌঁছানো হয়নি। অধ্যক্ষ কলেজ সরকারিকরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করে আসছেন।