পড়াশোনা শেষ করেছেন কয়েক বছর আগেই। কিন্তু চাকরি জোটেনি কালীগঞ্জের রবিউল ইসলাম রবির ভাগ্যে। তাই বলে হাল ছাড়ে তিনি। বাড়ির পাশের ১৬ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছেন, ঔষধি গাছ লাগিয়েছেন, ফলের বাগান করেছেন। প্রতিটি চাষই বানিজ্যিক ভিত্তিতে করেছেন। চাকরি না পাবার কারণে তিনি এসব ফলের আবাদ শুরু করেছেন। চাষ করে তিনি তার ভাগ্যের পরিবর্তন ও ঘটিয়েছেন। তরুণ এ উদোক্তা সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান। এলাকায় সাধারন মানুষ অনেকেই তার মতো দেখাচ্ছেন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন।
রবিউল ইসলাম রবি কালীগঞ্জের কোলা ইউনিয়নের কাকলাশ গ্রামের মৃত ছবেদ আলী ম-লের ছেলে। তিনি জানান, ফল ও ঔষধি গাছের বাগান সবার নজর কেড়েছে। অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ফল ও ওষধি গাছ রোপনের জন্য। ছয় বিঘা জমির মাল্টা বাগানে এবারই প্রথম ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছে। আরো কয়েক বছর এ বাগান থেকে মাল্টা পাওয়া যাবে। তিনি আশা করছেন এ বাগান থেকে কয়েক লাখ টাকার মাল্পা ফল বিক্রি করতে পারবেন।
রবিউল ইসলামের বাড়ির চারপাশেই দারুচিনি, তেজপাতা, লিচু, লটকন, কদবেল, চালতা, বেদানা, জলপাই, লিচু, আম, জাফরান, বেল, পেয়ারা, জাম, আমড়া, করমচা, আমলকী, লেবুসহ বিভিন্ন ফল ও ঔষধি গাছ। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজির বাগান। তিনি আর নতুন নতুন ফলের চাষ করতে চায়। রবিউলের মাল্টা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, দেড় শতাধিক গাছে ঝুলছে সবুজ ও হলুদাভ রঙয়ের মাল্টা। কিছু মালটা পাকতে শুরু করেছে।
রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাগান করার শখ। তাই পড়াশোনা শেষে চাকরির পেছনে না ছুটে বাণিজ্যিক ভাবে ফলের বাগান করেছি। চাকরির চেয়ে আত্মকর্মসংস্থানই বেশি মর্যাদার বলে মনে করি। চাকরির জন্য অনেক সময় বিভিন্ন স্থানে চেষ্টা ও করেছেন কিন্তু তার ভাগ্যে চাকরি জোটেনি। ফলে শেষ পর্যন্ত চাকরির আশা বাদ দিয়ে ফলের বাগান করে আত্মকর্মসংস্থানের মর্যাদার মধ্যদিয়ে সাবলম্বী হতে চায়।
২০১৭ সালের জুনে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার অভিজ্ঞ মাল্টাচাষি সাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে ৮৫০টি চারা কিনে ছয় বিঘা জমিতে বাগান করে। দেশি জাতের মাল্টার স্বাদ ভালো, বাজারে চাহিদাও বেশি। সারা বছর এ বাগানে চারজন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের সাথে রবিউল ও কাজ করে থাকে। প্রতিদিন বাগানের সমস্থ এলাকা ঘুরে প্রতিটি গাছ দেখাশুনা করে থাকে। তার বাগান দেখতে এলাকার ও দুরদুরান্তের অনেকেই দেখতে আসে। তারা মালটা বাগান করবে বলে রবিউলের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকে। সে তাদের ও উৎসাহ দিয়ে থাকে মালটা বাগান করার জন্য। এ এলাকায় প্রথম মাল্টা চাষ করেছে রবিউল। প্রথম দিকে এত বড় ঝুঁকি নিতে ভয় লেগেছিলো। কিছুদিনের মধ্যেই গাছ গুলো সতেজ হয়ে ওঠে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
রবির ভাই আতাউর রহমান জানান, রবিউলের ফল, সবজি ঔষধি গাছে বাড়ির চারপাশ ছেয়ে গেছে। শুরুতে সবাই বাধা দিয়েছিল। কিন্তু সফলতা আসায় তাকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরাও বাগানের পরিচর্যায় সহায়তা করে।
ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন জানান, রবিউল ছোটবেলা থেকেই ধৈর্যশীল ও কঠোর পরিশ্রমি। চাকরির পেছনে না ছুটে যে উদ্যোগ নিয়েছে, এতে আরো অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক অনুপ্রাণিত হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, রবিউল ইসলাম রবি সৃজনশীল মনোভাবের মানুষ। কৃষি কর্মকর্তারা অনেকবার তার বাগান দেখতে গিয়েছেন। সবাই রবিউলের প্রশংসা করেছেন, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। সঠিক পরিচর্যায় অল্প সময়েই স্বাবলম্বী হবেন তিনি।