বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার আগে নির্যাতনকারী সেই মেহেদি হাসান রবিন সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর উঠে আসছে। সে কট্রোর জামায়াত পরিবারের সন্তান। তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে নাশকতার মামলাও। বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত এই সাংগঠনিক সম্পাদক রবিনের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার কাপাশিয়া পূর্বপাড়া এলাকায়। নিজের পরিবারকে বাঁচাতেই তথ্য গোঁপন রেখে পর্যায়ক্রয়ে ছাত্র লীগের নেতার পদও লুফিয়েছেন। আর দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে শীর্ষ নেতাদের চোঁখে ধূলো দিয়ে সংগঠনপরিপন্থী কাজ করতেন এই রবিন। জামায়াত পরিবারের নির্দেশনা অনুযায়ী কৌঁসুলি রবিন মনজয় করে নিয়েছিল ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের। এমন অনেক তথ্যই উঠে এসেছে।
জানা গেছে, দলের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হত্যার নির্যাতনের শুরুটা করেছিলেন এই মেহেদি হাসান রবিন। জামায়াত পরিবারের এই সন্তান আবরারের স্বাধীন মতপ্রকাশের ইস্যু বানিয়েই সংগঠনের শীষ নেতাদের ভুল পথে পরিচালনা করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের কতিপয় নেতৃবৃন্দের অসৎস্বার্থ পূরণ করে দলে নেয়া এই রবিনের পূর্ব ইতিহাস খতিয়ে দেখা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন রাজশাহীর স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
এ বিষয়ে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলী বলেন, রবিনের দাদা ও চাচা দু’জনেই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রবিনের দাদা মমতাজ উদ্দিন মারা যাওয়ার আগে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনও করেছেন। আর চাচা ইমরান আলী সক্রিয়ভাবে জামায়াতের রাজনীতি করেন। বর্তমানে এই ইমরান আলীর বিরুদ্ধে চারটি নাশকতার মামলাও রয়েছে। আর রবিনের বাবা স্কুল শিক্ষক মাকসুদ আলীও আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। রবিনের দাদা চাচারা জামায়াতের রাজনীতি করলেও তার বাবা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কৌঁসুলি স্কুল শিক্ষক মাকসুদ আলী কাটাখালী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদটিতেও ইতোমধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। কী কারণে তারা (পিতা-পুত্র) মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শীর্ষ এই সংগঠনে অনুপ্রবেশ করেছে তা এখন ক্রমেই আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে স্থানীয় পর্যায়ে থাকা নব্য এই আওয়ামী লীগ নেতার বিষয়টিও মাথায় নিয়েছি, দেখব।
তবে নিজের জামায়াত পরিবারকে বাঁচাতেই কৌশলে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন বিষয়টি অস্বীকার করে রবিনের বাবা মাকসুদ আলী বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। তবে আমার বাবা ও ভাই একসময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ভাই এখন নিস্ক্রিয়। কলেজের চাকরি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই তাকে চারটি নাশকতার মামলায় আসামি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন নব্য আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলী।
রবিনের বাবা মাকসুদ আলী পার্শ্ববর্তী পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের ভরুয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। রবিন তার একমাত্র সন্তান। রবিন বাবার স্কুল থেকেই এসএসসি পাশ করেন। এরপর রাজশাহী গভ. নিউ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। চতুর্থ বর্ষে অধ্যায়নরত রবিন আর সাত মাস পরেই তার বুয়েট থেকে পাশ করে বের হওয়ার কথা ছিলো।
এদিকে রবিনের বাবার দাবি, বুয়েটে ভর্তির পর শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেলের উৎসাহেই রবিন সংগঠনে তার নাম লেখান। এরপর আস্থাভাজনের কারণেই গত রমজান মাসে রবিনকে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি না করার জন্য রবিনকে নিষেধ করেছিলাম। রবিনের বাবা মাকসুদ আলী আরো বলেন, এলাকায় আমার ছেলে শান্ত প্রকৃতির বলে পরিচিত। রবিনের মা রাশিদা খাতুন বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। এটা প্রমাণ করতে হবে।
জানা গেছে, বুয়েট শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত ফুটেজ আর জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পারেন আবরার ফাহাদকে নির্যাতনের প্রথম আঘাতটি করেন মেহেদি হাসান রবিন। আবরারের মৃত্যুর পর রবিন পালিয়ে গেলেও পরে গ্রেফতার হয়।