অবশেষে আলোচিত কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১৯বছর বয়সে নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করে যোবেদ আলী নামের এক বৃদ্ধ ওষুধ না খেয়ে সুস্থ্য থাকার খবর পেয়ে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জনাব শেখ মুজিবুর রহমান এনডিসি। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন, জেলা তথ্য কর্মকর্তা নুরুনবী সরকার বাদল, পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ লাল, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি আহসান হাবিব নীলু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহঃ রাশেদুল হক প্রধানসহ জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাবৃন্দ। ১১অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ী থেকে ইউএনও এর গাড়ী যোগে নিয়ে এসে রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক অনাড়ম্বর আয়োজনে অতিথিগণ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। চলতি বছরের জানুয়ারীর শুরুতেই সাংবাদিক প্রহলাদ মন্ডল সৈকত এর প্রবীন যোবেদ আলীর সাক্ষাৎকার লেখাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও নিউজ পোর্টাল অনলাইনের মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
কথোপকথনে আন্তরিক মুহুর্তে সচিব এই প্রবীণ মানুষটির হাতে নানা উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে বলেন- ‘ব্যক্তি জীবনে আমি, আমরা অনেক জরুরী কাজের ভীড়ে, এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় প্রবীণ এই মানুষগুলোকে আমরা হর-হামেশাই গুরুত্ব দেইনা। কিন্তু এমন একসময় ছিলো এই প্রবীণ মানুষগুলি ছিলো কারও সমস্ত আবদার পুরণকারী বাবা কিংবা মা বা অভিভাবক। জীবন ¯্রােতে টগবগে ভালোবাসা, খাবার উৎপাদনকারী এই মানুষগুলোই একসময় হয়ে যায় বড় একা।। গল্প করার জন্য খুজে বেড়ায় কাছের মানুষগুলোকে। কিন্তু তার যে বয়স হয়েছে। পারিবারিক মুল্যবোধ তৈরী, সামাজিক নীতি নৈতিকতা, মানবিক আচরণই পারে নবীন ও প্রবীণ এর এই ফাঁকা সম্পর্ককে পূরণ করতে।
তিনি আরো বলেন, পরিবারের বাইরে প্রবীণ হৈত্যেষী ক্লাব তৈরী করে সমমনা ও সমবয়সের এই মানুষগুলোকে রাখা যেতে পারে স্বস্তিতে, শান্তিতে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে পাওয়া যেতে পারে জীবনলব্ধ দামী পরামর্শ, অফুরন্ত মমতা। বয়স থেমে থাকে না, আমি আমরা প্রবীণ হবো, তাই ভাবতে দেরী কেন?’ মূল্যবান কথাগলো শুনে প্রবীন যোবেদ আলী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন- ‘আমি সাংবাদিকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের কারণে আমার এ পাওয়া। আজ আমি ধন্য। আমি সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করি, তাদেরকে ভালবাসি। আমি ভাল আছি।’
উল্লেখ্য রাজারহাট উপজেলার সাংবাদিক প্রহলাদ মন্ডল সৈকত ১১৯বছরের প্রবীন মোঃ যোবেদ আলীর সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার করার সময় তাঁর জিবনের ফেলে আসা দিনগুলি তুলে ধরেন। তাকে সহযোগীতা করেন অপর সাংবাদিক ইমতিয়াজুল ইসলাম লাভলু। সাক্ষাৎকারে প্রবীন যোবেদ আলী বলেন, জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ ১৯০০ সালের ২৫ অক্টোবর হলেও তার বয়স হয়তো আরো বেশী হবে। তিনি উপজেলার রাজারহাট ইউনিয়নের মেকুরটারী তেলীপাড়া গ্রামের মৃত হাসান আলীর পুত্র। তাঁর স্ত্রী ফয়জুন নেছা(৮৭), ৩পুত্র ও ৪কন্যা সহ নাতি-নাতিনী সহ বহু বন্ধু-বান্ধব ও গুনগ্রাহী রয়েছে। তিনি বলেন, মোর ঠিক বয়স মনে নেই, তবে আইডি কাডত যা আছে তার চেয়ে বেশী হবে। ছোট বেলা থেকে যুবক বয়সে তিনি নিজের দিঘীর মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, আবাদি বিতরী ধানের ভাত, খাঁটি ঘি, সরিষার তৈল, রাসায়নিক সার বিহীন শাক-সবজি নিয়মিত খেতেন। এই বয়সে তাঁর ছোট খাট জ¦র-সর্দি ছাড়া বড় ধরনের কোন রোগ ব্যাধি হয় নাই। শরীর এখনও তাঁর ভাল আছে। তিনি একশ বছর আগে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তাই তিনি নিয়মিত পবিত্র কুরআন-মাজিদ, পত্রিকা ও বই পড়তে পারেন। রাতে তিনি কুপি জ¦ালিয়ে পবিত্র কুরআন-মাজিদ পড়েন। তিনি আরো বলেন, কোনদিন ফজরের নামাজ আমি ক্বাজা করি নাই এবং ফজরের নামাজের পর কুরআন তেলোয়াত করি। তাই হয়তো আল্লাহ্ পাক আমাকে সুস্থ্য রেখেছেন। এজন্য আল্লাহ্র কাছে লাখো শুকরিয়া। এ ছাড়া পত্রিকা পড়াই তার এখন প্রধান নেশা বলে জানান।