রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর বাজারে আখের গুড় বিক্রির সময় ৪৮টি ভ্যানের এক হাজার মন গুড় জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ৫টি গুড়ের কারখানা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভ্রাম্যমান আদালতের একজিকিউট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত আজিজ আমান ৪ জন গুড় প্রস্তুত কারির ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। জব্দকৃত গুড় আড়ানী বাজার সংলগ্ন বড়াল নদে ফেলে ধবংস করা হয়। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী র্যাব-৫ এর এএসপি সজল আহাম্মেদ ও জামিল হোসেনের নের্তৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জানা যায়, বাঘা উপজেলার আড়ানী হাটটি এলাকার মধ্যে সবচেয়ে পুরানো এবং ঐতিহ্যপূর্ন। এহাটে ব্রিটিশ আমল থেকে নানা রকম পন্যোর মধ্যে-হলুদ,পাট এবং গুড়ের ব্যবসা অন্যতম। তবে কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ অতিলাভের আসায় নি¤œমানের চিনি, মোনালিসা (সুগার মিলের গাদ) এর সাথে নানা রকম ক্যামিকেল, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকিরি, ডালডা, আটা, আলু এবং বেলুন পাট গাছের ছাল ব্যবহার করে ভেজাল গুড় তৈরী করে আসছিলেন। যা মানব দেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর।
এছাড়া চিনির চেয়ে গুড়ের মুল্য দাম বেশি হওয়ায় আড়ানী বাজার এলাকার আখের গুড় তৈরীর জন্য আড়ানী বাজারে প্রতিদিন ৫-৬ ট্রাক চিনি মিশ্রিত গুড় রপ্তানী করা হয়। যারা গুড়ের আড়ত পরিচালনা করে তাদের সংখ্যা ৩৫-৪০ জন। পাশাপাশি যারা ভেজাল গুড় তৈরী করে তাদের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। এই হাটে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মন আখের ভেজাল গুড় আমদানি করা হয়। তারপর সেই গুড় ট্রাক, ট্রেন, ভটভটি যোগে নাটোর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, জয়পুরহাট, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চালান দেয়া হয়।
রাজশাহী র্যাব ৫ এর এএসপি সজল আহাম্মেদ ও জামিল হোসেন জানান, বাঘা উপজেলা আড়ানী পৌর এলাকা এবং বাউসা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ভেজাল গুড় তৈরীর শতাধিক কারখানা আছে। এরমধ্যে গোপন তথ্যের ভিত্তিকে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে প্রথমে আড়ানী বাজারে অভিযান চালিয়ে ৪৮টি ভেজাল গুড়ের ভ্যান আটক করা হয়। তারপর খোদ্দ বাউসা এলাকার রাজন আলী তার ভাই সুজন আলী এবং তার চাচা সাত্তার শাহার ভেজাল গুড় তৈরীর কারখানায় আভিযান পরিচালনা করা হয়। এ কারখানায় গুড় তৈরীর উপকরণ, একাধিক সরনজাম ও ক্যামিক্যাল জব্দ করা হয়। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সাত্তার আলী পালিয়ে গেলেও তার দুই ভাতিজাকে ভেজাল গুড়সহ আটক করা হয়। পরে জেলা আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত আজিজ আমান তাদের স্বীকারুক্তি মোতাবেক ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে উভয়ের ৫০ হাজার করে ১ লক্ষা টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারা দন্ডের রায় দেন।
এর আগে আড়ানী পৌর এলাকার সাহাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ভ্যাজাল গুড়সহ আটক করা হয় জাহেদ আলী এবং ভ্যান চালক জালাল হোসেনকে। এ সময় তারা অপরাধ স্বীকার করায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী একজিকিউট ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত আজিজ আমান বলেন, আটক ৪ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ভেজাল গুড়ের কারখানা ও বাজারে জব্দকৃত গুড় জব্দ বাজার সংলগ্ন বড়াল নদে ফেলে ধবংস করা হয়েছে।