চিকিঃসক সংকট, প্যাথোলজি বিভাগে দক্ষ টেকনিশিয়ান সংকট, ডেঙ্গু জ¦রের পরীক্ষা সরঞ্জাম সংকট। এভাবেই জোড়াতালী দিয়ে চলছে ঝিনাইদহের একমাত্র বাণিজ্যিক উপজেলা সদরে অবস্থিত কালীগঞ্জ উপজেলা ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালটি। ফলে এই উপজেলার এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত সকল রোগীদের পাঠানো হচ্ছে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অথবা ঝিনাইদহ সদরে।
জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার ২নং জামাল ইউনিয়নের শুরুর প্রথম গ্রামের নাম তৈলকুপী। গ্রামটির তিন পার্শ্বে নদী আর এক পাশ্বে রাস্তা। যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নতি নেই। গত সপ্তাহে এই গ্রামেরই এক কিশোর আর শিশু ডেঙ্গুজ¦র নিয়ে চিকিঃসা নিতে ভর্তি হতে চেয়ে ছিলেন কালীগঞ্জ ফয়রা গ্রামে অবস্থিত থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিঃসকগণ রোগী দুটি রেফার্ড করলেন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরা হলো যথাক্রমে মোঃ সুলতান মল্লিকের কিশোর পুত্র মোঃ মেহেদী হাসান এবং মোঃ লিটন হোসেনের শিশুপুত্র মোঃ আমিন হোসেন এরা দু’জনই শহরের প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে ডেঙ্গু টেষ্ট করেছিলেন। গত সপ্তাহে আরো এক যুবক ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়েছেন। সে হলো কালীগঞ্জ শহরের হাসপাতাল সড়কের মোঃ আলা উদ্দীন একমাত্র পুত্র পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র মোঃ তন্বয় হোসেন ওরফে তনু ।
ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রায় প্রতিটি পরিবারের অভিযোগ ইতঃপূর্বে ডেঙ্গু পরীক্ষার প্রধান কিট নামীয় উপকরণ এবং অভিজ্ঞ টেকনিশিয়াল না থাকায় তারা কালীগঞ্জ সরকারী হাসপাতালে গিয়ে কোন চিকিৎসা পায়নি। ফলে বাধ্য হয়েই সংশ্লিষ্ট পরিবারের লোকজন ডেঙ্গু আক্রান্তদের বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য ছুটে গেছেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে অথবা যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তৈলকুপী গ্রামের তরুন সমাজ সেবক আতিকুল ইসলাম বাচ্চুর দাবী, যেহেতু এডিস মশা ২২নং জামাল ইউনিয়নে ঢুকে পড়েছে পড়েছে সেহেতু সংক্রমক রোগ বাহিত এই মশা ও তার লারভা ণিধনে তার গ্রাম সহ সমগ্র ইউনিয়ন ব্যাপি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যেগে ক্ষতিকারক এই মশা নিধনের ঔষুধ ছিটানো হোক। তার দাবী ঔষুধ ছিটানোর কাজটি অক্টোবর মাসব্যাপি অব্যাহত থাকলে এডিস মশা নির্মুল হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং এমপি মহোদ্বয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অন্যএক তথ্যে জানাগেছে গত এক সপ্তাহে কালীগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ডের সিটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করে ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। পাশ্ববর্তী ইকোতে ২জন হাসপাতাল সংলগ্ন ক্যানোলা ডায়াগনষ্টিক কমপ্লেক্সে ১জন জ¦রা আক্রান্ত রোগীর রক্তে ডেঙ্গুর জীবানু পাওয়া গেছে। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত খবরে জানা গেছে, সম্প্রতি কালীগঞ্জ সরকারী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা হাসপাতালে কিট সরবরাহ দেওয়ায় তারা ডেঙ্গু সনাক্ত করনের কাজ করে যাচ্ছে। তবে আক্রান্ত রোগীদের অভিভাবকরা নির্ভরযোগী চিকিৎসার জন্য ছুটে যাচ্ছে যশোর ও ঝিনাইদহরে বড় বড় সরাকরী বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রে।
একতারপুর গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে তানভীর। গত ১৬ তারিখে প্রচন্ড জ¦রে আক্রান্ত হয়। দু’দিন স্থানীয় চিকিৎসকে দেখিও জ¦র না কুমায় কালীগঞ্জ স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে পরিক্ষা করে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। কয়েক দিন কালীগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও তার অবস্থার পরিবর্তন না হলে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রিফার্ড করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সেখান থেকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিতে বলা হয়। বর্তমানে খূলনা ২৫০ শষ্যা হাসপাতালে মারাত্বক অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে। প্রতিদিনই তাকে রক্ত দিতে হচ্ছে। একই গ্রামের মীর আবদুল করিমের স্ত্রী জহুরা খাতুন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর জ¦রে আক্রান্ত হন। ৪ দিন ধরে কোন পরিবর্তন না হওয়ায় ২০ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পর রক্ত পরিক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। গত ২২ সেপ্টেম্বর ছাড় পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরে। বর্তমানে জ¦র না থাকলেও শাররিক দূর্বলতায় উঠতে পারছেনা। পাশের বাড়ির রমজান আলীর মেয়ে স্কুলছাত্রী রাবেয়া খাতুন (১৫)। গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রচন্ড জ¡ের আক্রান্ত হয়ে বমি করে। স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়ার পরও কোন পরিবর্তন না হওয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ২দিনের ব্যবধানে রাবেয়া খাতুনের মা শেফালী বেগম(৪৫) ও তার বড় ভাই আসিফ সহ একই পরিবারের ৩জন প্রচন্ড জ¦রে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শুধু তারাই নয় একই গ্রামের একই পাড়ার আবুল হোসেন ছেলে হাফিজুর রহমান, আবদুর রাজ্জাকের ছেলে শরিফুল হোসেন, আসলাম হোসেনের স্ত্রী চম্পা খাতুনসহ গত ২৫দিনে কমপক্ষে ২৫জন ডেঙ্গু রোগে সন্ধান পাওয়া যায়। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তরা সবাই প্রথমে কালীগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলে জানান এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচানপুর ইউনিয়নের একতারপুর গ্রামের মন্ডল পাড়ায়। এ ঘটনায় ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রাম গুলোতেও।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: হুসাইন সাফায়াত বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ইতোমধ্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিষয়ের তিনি বলেন, এটা স্থানীয় সরকারের ব্যাপার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সূবর্ণা রানী সাহা বলেন, বিষয়টি জানার পর সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
এলাকার মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে সেজন্য ওষধ স্প্রে ও এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুফিয়া বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ত্রিলোচানপুর ইউনিয়নে বানুড়িয়া গ্রামের আবদুর রহিমের স্ত্রী। এ ছাড়া গত ৪ সেপ্টেম্বর তারানা বেগম নামের এই নারী ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠানো হলে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। তারানা বেগম উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আলতাফ হোসেনের স্ত্রী।