‘স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার, তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওষুধ চুরি, টেন্ডারবাজিদের প্রশ্রয়দাতা পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদের ব্যর্থ সদস্য সচিব ও বিধিবহির্ভূতভাবে দীর্ঘদিন ধরে আঁকড়ে থাকা চিকিৎসকদের অবিলম্বে বদলী করতে হবে। রোগীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় হাসপাতালের কর্তাবাবুদের ধারাবাহিক অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। আর চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশ্রয়দাতা হাসপাতাল পরিচালকসহ অসাধু কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বদলীর দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ আরও বেশকিছু দাবিতে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালনকালে এমন হুশিয়ারি দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নের্তৃবৃন্দ।
সকাল ১০টায় নগরীর নিউ মার্কেট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে গিয়ে বিশাল সমাবেশ করেন সংগঠনটি। এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর মানুষ অংশ নেন। সমাবেশ থেকে রামেক হাসপাতালের রোগীদের বাসি-পঁচা খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারদের দৌরাত্মের প্রতিবাদ ও সকল অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধেরও দাবি জানানো হয়। কর্মসূচি থেকে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত, রাজশাহীতে পাইন লাইনে অবিলম্বে গ্যাসের পূণঃসংযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া রাজশাহী জেলা ও মহানগরে গড়ে উঠা মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর অভিযান ও মাদকের ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষার দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে নগরীর নিউ মার্কেট থেকে সড়ক ফুটপাত দুখলমুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান, সাংগাঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু, রাজশাহী চেম্বারের সাবেক পরিচালক হারনার রশিদ, একাত্তরের গেরিলা মিনহাজ উদ্দিন মিন্টু, প্রকৌশলী খাজা তারেক, অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু, অধ্যাপক জিএম হারুণ, নারী উদ্যেক্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সেলিনা বেগম, মাওলানা মাকসুদুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধ বজলুর রহমান, রাজশাহী ফটোসাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, আদিবাসী নেতা সুভাষ চন্দ্র হেমব্রন, শ্রমিক নেতা শাহীন শেখ, ছাত্রনেতা একেএম জুবায়েদ হোসেন জিতু, সৌরভ হোসেন, নারী নেত্রী শাহানাজ পারভীন সাগরিকা, অরুনা আকতার চাইনা প্রমুখ।
সমাবেশে জামাত খান তার বক্তব্যে বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন চিকিৎসাসেবার পরিবর্তে অপচিকিৎসালয়ে পরিনত হয়েছে। রোগীরা চিকিৎসাসেবার পরিবর্তে নার্স, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা কর্মচারিদের হাতে প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছে। অধিকারের কথা বলতে গেলে রোগী ও তার স্বজনরা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এসব বন্ধ করে রোগীবান্ধব হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে।
জামাত খান বলেন, ‘সম্প্রতির নগরী ও জেলার আনাচে-কানাচে মাদকের অবাধ বাণিজ্য চলছে। এর পেছনে বড় বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান চললেও মাদকের গড়ফাদারার আইনের আওতায় আসছে না। বরং দিনকে দিন মাদকের আগ্রাসন বাড়ছে। তাই মাদকের গডফাদারদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে ২০১৩ সালে গ্যাস সরবরাহ চালু করা হলেও তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ষড়যন্ত্র করে বন্ধহওয়া গ্যাস সংযোগ চালু করতে হবে। সম্প্রতি রাজশাহীতে সংস্কারের নামে সড়কের গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে কাকনহাট হয়ে আমনূরা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রাস্তার দুই হাজার গাছ নিধন করা হয়েছে। সরকার যেখানে বার বার সবুজায়ন করার চেষ্টা করছে সেখানে রাজশাহীজুড়ে অবাধে বৃক্ষ নিধন করে পরিবেশ নস্ট করা হচ্ছে। অবিলম্বে এসব বন্ধ করাসহ সুন্ধর নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের দাবি সমূহ অবিলম্বে মেনে নিতে হবে। নয়তো, নগরবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।