নাটোরের সিংড়ার বসন্তপুর মাঠ থেকে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপের ৩টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় ১৭৫ বিঘা জমিতে সেচ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সেচ দিতে না পারায় জমিতে ঘাস জন্মাতে শুরু করেছে। অনেক জমি ফেটে গেছে। এতে কৃষকরা তাঁদের রোপন করা ধানের জমিতে সেচ দিতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এদিকে নলকূপটির নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ দিন আগে রাতের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা বসন্তপুর মাঠের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালিত গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ৩টি ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে ওই গভীর নলকূপের আওতাধীন ১৭৫ বিঘা জমিতে রোপন করা ধান ক্ষেতে সেচ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সদ্য রোপন করা এসব জমিতে এখন প্রতিদিন অন্তত দুইবার করে সেচ দেওয়া দরকার। হঠাৎকরে নলকূপ বন্ধ হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ধানচাষীরা।
বসন্তপুর গ্রামের কৃষক অজিত কুমার সরকার জানান, গভীর নলকূপের আওতায় তাঁর নিজেরই ১৩ বিঘা জমিতে রোপা ধানের আবাদ রয়েছে। ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ নেই। আর সময় মতো সেচ দিতে না পারায় ধানের জমিতে ঘাস জন্মাতে শুরু করেছে। অনেক জমি ফেটেও গেছে। কিছু কিছু জমির চারা মরতে শুরু করেছে। একই অবস্থার কথা জানালেন এই নলকূপের আওতাধীন কৃষক প্রদীপ কুমার, পলাশ কুমার সরকার ও বিমল কুমার। তাঁরা জানান, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি জানানোর জন্য তাঁরা নাটোরে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের স্থলে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করবেন না বলে ছাপ জানিয়ে দিয়েছেন। কৃষকদের পক্ষ থেকে নতুন ট্রান্সফরমার কেনার জন্য অর্ধেক টাকা (৭০ হাজার) কর্তৃপক্ষকে দিতে চাইলেও তাঁরা তাতে রাজি হননি। পুরো টাকা নগদে দিয়ে ট্রান্সফরমার কেনাও তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান কৃষকরা। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।
নলকূপটির চালক (অপারেটর) বরুন প্রামাণিক জানান, এই নলকূপ থেকে আশে পাশের ১৭৫ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া হয়। কৃষকরা প্রিপেইড কার্ডে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিয়ে থাকেন। তিনি প্রতি ঘন্টায় পারিশ্রমিক বাবদ ৮ টাকা করে পান। তাঁর পক্ষে রাত জেগে ট্রান্সফরমার পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা ট্রান্সফরমারটি চুরি করেছে। এখন কৃষকদের পাশাপাশি তিনিও বিপাকে পড়েছেন।
স্থানীয় কৃষক অজিত কুমার সরকার জানান, ১৯৮০ সালে তৎকালীন বিআরডিবি কর্তৃপক্ষ বসন্তপুর সমাজকল্যাণ সমিতি গঠন করে। পরে তাঁদেরকে ঋণের মাধ্যমে ডিজেল চালিত গভীর নলকূপ স্থাপন করে। সমিতির মাধ্যমে এটি পরিচালিত হতো। পরে (১৯৯৪) নলকূপটিতে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়। ২০০৪-২০০৫ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গভীর নলকূপটিতে চার হাজার ফুট ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ নালা তৈরি করে দেয়। তখন থেকে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে চলছে নলকূপটি। তবে নলকূপ পরিচালনার জন্য স্থানীয়ভাবে কৃষকদের নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেওয়া আছে। কৃষকরা প্রতি ঘন্টায় ১২০ টাকা খরচ করে সেচ সুবিধা গ্রহণ করে। আকষ্মিকভাবে ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় চাষীরা বর্তমানে রোপন করা ধান চাষ নিয়ে অনিশ্চিয়তায় পড়েছেন। সেচ দিতে না পারলে কৃষকরা অন্তত ৩০০০ মণ ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষকের সমস্যা সমাধানে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আনছারুল করিম জানান, ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেলে কর্তৃপক্ষের পক্ষে বিনামূল্যে নতুন ট্রান্সফরমার দেওয়া সম্ভব নয়। তবে নলকূপ ব্যবস্থাপনা কমিটি অর্ধেক টাকা জমা দিয়ে পরবর্তীতে কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন দরকার। এ ছাড়া তাঁরা সাশ্রয় মূল্যে ট্রান্সফরমার তৈরি করেও নিতে পারেন।