চাটমোহরে পাটের কাঙ্খিত দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষী। মৌসুমের শুরুতে সোনালী আঁশের ভালো দাম পেলেও বর্তমানে দাম কমতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চাষিদেরকে পাট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। দীর্ঘ ৩০ বছর পর বড়াল নদী পানিতে ভরে যায়। চিকনাই ও গুমানী নদীও পানিতে টইটুম্বুর। বিলেও পানি রয়েছে। ফলে পাট জাগ দেওয়া ও ধোয়ার সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু এখন পাট বিক্রি করে কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় চাটমোহরের চাষিদের মুখ মলিন।
পাট চাষিদের কথা বলে জানা গেছে,শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার পাটের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। তাদের হিসাব মতে এবার পাটের আবাদ করতে বিঘায় সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাট উৎপাদন হয়েছে বিঘায় ৮ থেকে ১২ মণ। চাটমোহরের সর্ববৃহৎ অমৃতকুন্ডা হাটে প্রতিমণ পাট বিক্রি হয়েছে ১৮শ’ থেকে ১৯শ’ টাকায়। মৌসুমের শুরুতে পাট বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ২২শ’ টাকা। গত বছর এ সময় পাট বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৩শ’ টাকায়। চাষিরা বলছেন এবারও দাম ভাল পাবার আশায় তারা পাটের আবাদ করেছিলেন। এখন পাট বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচ উঠলেও তেনভাবে লাভ হচ্ছে না। তারা মনে করেন,মধ্যসত্বভোগী ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে পাটের দরপতন হয়েছে।
চাটমোহরের মূলগ্রাম ইউনিয়নের বন্যাগাড়ি গ্রামের পাট চাষি আঃ কাদের এবার ৩ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন মোটামুটি ভাল হয়েছে বলে জানালেন। তার এলাকার চাষিরা বিঘায় ৮ থেকে ১২ মণ করে পাট পাচ্ছেন। বর্তমানে পাট বিক্রি হচ্ছে গ্রাম এলাকায় ১৮শ’ টাকা মণ দরে। এই দামে পাট বিক্রি করে চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন না। হোগলবাড়িয়া গ্রামের পাটচাষী বাহাদুর আলী অমৃতকুন্ডা হাটে এসেছিলেন পাট বিক্রি করতে। জানালেন সাড়ে ১৮শ’ টাকা মণ পাট বিক্রি করেছেন। এতে লাভ হয়েছে সামান্য। তবে পরিবহণ খরচ ও খাজনা দিয়ে কিছুই থাকছে না। তিনি জানালেন পাটখড়ি বিক্রি করে এই লোকসান পোষাতে হচ্ছে।
চাটমোহর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়,এবার চাটমোহরে পাটের আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে। ফলনও ভালো হয়েছে।
পাটের দাম আরো বাড়বে বলে পাটের ক্রেতা আঃ কুদ্দুস সরকার জানালেন। যখন দাম বাড়বে,তখন কৃষকের ঘরে খুব একটা পাট থাকবে না। চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান রশীদ হোসাইনী জানালেন,পাটের দাম যদি ২২শ’ টাকা মণ বিক্রি হয়,তাহলে চাষীরা লাভবান হবেন। তিনি বলেন,চাটমোহরে বিনা নিড়ানিতে পাট চাষ হওয়ায় চাষীদের রোকসান হয় না। কিছুটা হলেও লাভ হয়। তবে এবার আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না।