শেরপুরের নকলায় অবাধে নিধন করা হচ্ছে অরণ্যের পাখি। নির্বিচারে নিধন করায় বিলুপ্ত হচ্ছে তাঁতী পাখি বাবুই। ফলে বিপন্নের পথে নিপুণ কারিগর বাবুই পাখিসহ পরিবেশ বান্ধব অনেক পাখি। চন্দ্রকোনা বন্দটেকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে অবাধে বাবুই পাখি ধরা হচ্ছে। সম্প্রতি স্থানীয় হায়দর কবিরাজ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে বিশেষ কৌশলে বাবুই পাখি ধরছেন। বাবুই পাখিগুলো বাঁচার তাগিদে খাদ্যের সন্ধানে এসে, নিজেই লোভী মানুষের খাদ্যে পরিণত হচ্ছে।
চন্দ্রকোনা রাজলক্ষী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে অরণ্যের পাখি, আর মহা বিপন্নের পথে হাটছে বাবুই পাখি ও তাঁতির কৌশলে তার নিজের তৈরী বাসা। বাল্যবিবাহ, মাদক, জুয়ার মত বিভিন্ন অপরাধ যেমন সমাজ ধ্বংস করে, ঠিক তেমনি পাখি নিধন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টকরে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে সমাজ এমনিতেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই সামাজিক অপরাধ দমনের পাশাপাশি পাখি নিধন ও অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ করা জরুরি। তিনি বলেন, বাবুই পাখির বাসা আজ অনেকটা স্মৃতির অন্তরালে বিলীন হতে চলেছে। অথচ আজ থেকে ১৫/১৬ বছর আগেও প্রতিটি এলাকায় তাল ও খেজুর গাছে তাঁতি পাখির কিচির মিচির শব্দ শোনা যেত। দেশের প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জের মাঠে ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত বাবুই পাখির নিপুণ কারুখচিত তৈরি বাসা।
পাখি প্রেমি ফকির শহিদ বলেন, পুরাতন গাছ নিধন, বিশেষ করে তালগাছের মত গাছগুলো কেটে ফেলা ও ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে অরণ্যের পাখি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তাছাড়া পাখি হারিয়ে যাওয়ার পিছনে জলবায়ু পরিবর্তনও ক্ষতিকর ভুমিকা রাখছে। এতেকরে বাবুই পাখি আজ মহা বিপন্নের পথে হাটছে। ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি ভেঙ্গে যাচ্ছে ইকোসিস্টেম। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাহিত্য শিল্পও।
চন্দ্রকোনা ইউপি চেয়ারম্যান সাজু সাঈদ সিদ্দিকী বলেন, এ বিষয়ে তিনি এলাকাবসীদের নিয়ে সতেনতামূলক মতবিনিময় সভা করেছন। এতেক্রমেই বাবুই পাখি নিধন বন্ধ হচ্ছে। ভবিষ্যতে তার এলাকায় বাবুই পাখিসহ অরণ্যের পাখি নিধন না করার ব্যাপারে তিনি সজাগ থাকবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, কৃষকরা নগদ লাভের আশায় ক্ষেতে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এতে উপকারী পোকামাকড়ের পাশাপাশি মারা যাচ্ছে বাবুই পাখির মত কীটভোগী পরিবেশ বান্ধব অরণ্যের অনেক প্রজাতির পাখি। পরিবেশ বান্ধব পাখি কমে যাওয়ায়, বাড়ছে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয়। তাই অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে গাছ লাগানোর পাপাশি যেকোনো পাখি নিধন বন্ধ করা জরুরি।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষায় পাখি নিধন বন্ধ করে, তাদের বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা উচিত। এ ছাড়া পাখির উপকারী দিক তুলেধরার মাধ্যমে গনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অরণ্যের পাখি নিধনে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হবে। তিনি জানান, সম্প্রতি উপজেলার গড়েরগাঁও এলাকা থেকে এক ডজন বক অবমুক্ত করা হয়েছে। এলাকার লোকজনদের নিয়ে করা হয়েছে সচেতনামূলক সভা। এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।