অবহেলিত জনপদ খুলনার কয়রা উপজেলার মানব কল্যাণ ইউনিট একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর এই সংগঠনটি প্রতিবন্ধিদের মাঝে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। শুধু প্রতিবন্ধিদের মাঝে সিমাবদ্ধ নয় পুরো মানব সেবায় নিরোলোশভাবে কাজ করায় কয়রা সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে প্রশাংসা পেয়েছে মানব কল্যাণ ইউনিট।
জানা গেছে কয়রা উপজেলার একঝাঁক মেধাবী উদ্যমী তরুণ মিলে ২০০৮ সালে মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রত্যাশায় গড়ে তোলে মানব কল্যাণ ইউনিট’ নামের এই স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনটি। সৃজনশীল চিন্তাধারায় উজ্জীবিত সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ২০১৭ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়াড প্রাপ্ত হয় প্রধানমন্ত্রীর আই সিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় এর কাছ থেকে। সংগঠনটির ১১ বছর পথ চলায় এর কার্যক্রম কয়রার সর্ব স্তরের মানুষের নজর কেড়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী কাজের উদাহরণ রেখে উপজেলাবাসীর মন জয় করে নিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা। সংগঠনে সম্পৃক্ত করে নিজেকে গড়তে আপন সন্তানকে এগিয়ে দিচ্ছে সচেতন অভিবাবকরা। সংগঠনের সভাপতি আল আমিন ফরহাদ সহ অন্যান্য সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আগত দিনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছেন নিজেদের ব্যক্তি উদ্যোগে। উপজেলার সকল স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মোটিভেশন সেমিনার এর আয়োজন এবং এতিম হাফেজী পড়ুয়া ছাত পবিত্র কোরআন বিতরণ করা অন্যতম। এ ছাড়া রয়েছে- স্কুল-কলেজ থেকে ঝরে পরা ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল কলেজে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা, গরিব-দুঃখী মানুষের জন্যে উন্নয়নমূলক কিছু করে দেয়া থেকে শুরু করে নদীর ভাঙ্গনকবলিত বেড়িবাধের পাশে তথা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপজেলার পতিত জাগাগুলোতে বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। সকল উন্নয়ন মুলক কাজ করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শ দক্ষ জনশক্তির বাংলাদেশ গড়তে তরুন -তরুণীদের তথ্য প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে এসে আইটি প্রশিক্ষনে কাজ করে যাচ্ছে মানব কল্যাণ ইউনিট পরিচালিত শেখ রাসেল শিশু ও প্রতিবন্ধি উন্নয়ন প্রকল্প। প্রাথমিক ভাবে নিজেদের অর্থায়নে আইটি স্কুল স্থাপন করা হয়, যেখানে সম্পূর্ণ ফ্রী প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সরকারের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের দেওয়া ওই প্রকল্পের অর্থে যাবতীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানটির কাজের গতি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রমে, গ্রাফিক্স ডিজাইন, আউট সোর্সিং প্রশিক্ষন নিয়ে আয় মুখী হচ্ছে যুবরা। প্রশিক্ষন সুবিধা নিচ্ছে নিচ্ছেন দুই শতাধিক তরুণ-তররুণী, রয়েছে শতাধিক সংখ্যক শিশু ও প্রতিবন্ধী।
কয়রা সদর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এইচএম হুমায়ুন কবির বলেন, একটি শিক্ষিত, সমৃদ্ধ, প্রগতিশীল মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মানব কল্যাণ ইউনিট নামক এ মানবিক সংগঠনটি। আমাদের ইউনিয়নবাসীও এখন অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এই সংগঠন নিয়ে। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তফা শফিকুল ইসলাম বলেন, "মানব কল্যাণ ইউনিটের সামাজিক সকল কাজ সত্যি প্রশংসার দাবীদার। সরকার কিংবা যে কোন বেসরকারি সংস্থা তাদের দিকে একটু সহযোগিতার হাত বাড়ালে আরও ভাল কাজ করতে পারবে বলে মনে করি। মানব কল্যাণ ইউনিটের সভাপতি আল আমিন ফরহাদ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশন ও সি আর আই এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনকে সামনে রেখে শুধু শিক্ষিত নয় চাই তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি" এই শ্লোগানকে সামনে রেখে উন্নয়নমূলক কাজ করার পাশাপাশি, প্রযুক্তিতে জনশক্তি গড়ে তোলা ও সুন্দর সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে মানব কল্যাণ ইউনিটের মাধ্যমে আইটি স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। শিশু প্রতিবন্ধী ও তরুণ-তরুণীদের প্রযুক্তিতে আগ্রহী করে সুন্দর একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে শামিল হওয়ার লক্ষে চলমান রয়েছে শেখ রাসেল শিশু ও প্রতিবন্ধি উন্নয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া আইটি স্কুলটিকে প্রশিক্ষনের মান বাড়ানোর জন্য কিছু কম্পিউটারে ও অন্যান্য যত্রাংশের ব্যবস্থা করা গেলে ২০২৩ সালের মধ্যে কয়রার যুবকদের বেকার মুক্ত করা যাবে তিনি মনে করেন। এজন্য মানব কল্যাণ ইউনিটকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।