সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ি আল মামুন বাবুর একটি ভিডিও নিয়ে তোলপাড় চলছে। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে বাবুর তৈরি করা একক ভিডিওটি ভাইরালের পর থমকে গেছে মান্দা থানা পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান। পুলিশ যখন তার মাদক কারবারের ওপর নজরদারি শুরু করে ঠিক তখনই পুলিশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে।
পারিবারিক বিরোধকে ইস্যু করে ভিডিওতে ওসির বিরুদ্ধে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ এনেছে মাদক ব্যবসায়ি বাবু। ওসি তাকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদেরও হুমকি দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ভিডিওটিতে। আল মামুন বাবু নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামের মৃত কাদের খানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে একোয়ারভূক্ত সম্পত্তি জবরদখলেরও অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মান্দা থানা পুলিশ বাবুকে হেরোইনসহ আটক করে। ওই ঘটনায় দীর্ঘদিন হাজতবাস করে বাবু। জামিনে বেরিয়ে এসে সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিনিয়ত রাতে বাবুর বাড়িতে বসে মাদকের আসর। একই সঙ্গে বাইরে থেকে নারী ভাড়ায় এনে চালানো হয় দেহ ব্যবসা। তার ভাই নয়নও এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি।
স্থানীয়রা জানান, মাদক ব্যবসায়ি বাবু নিজেকে ভূমিহীন দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে ভূমিহীন নয়। ২০০২ সালে মীরপুর এলাকায় নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের অদুরে নির্জন এলাকায় তার মামা লুৎফর রহমানের জমি জবরদখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ করে। শুরু করে মাদক ব্যবসা। এর পাশাপাশি একোয়ারভূক্ত জমি জবরদখলে মরিয়া হয়ে উঠে সে। দখল করে নিয়েছে একোয়ারভূক্ত জলাশয়। ইতোমধ্যে তার মামা লুৎফর রহমান মন্ডলসহ ওই গ্রামের আলেফ উদ্দিন, তমিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী, জফের উদ্দিন মোল্লা ও হাবিবুর রহমানের বেশকিছু জমি দখল করে নিয়েছে। দখলকৃত জায়গায় লাগানো হয়েছে আম, সুপারি, লেবুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
ভুক্তভোগী আলেফ উদ্দিন জানান, ‘আমার বেশকিছু জমি দখল করে বাবু সুপারি বাগান তৈরি করেছে। সুপারির চারা লাগানোর সময় বাধা দেয়ায় বাবু আমাকে মারধর করে। আমার ছেলে টুটুল সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। মামলা করে আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত করা হুমকি দেয়। এ ভয়ে তার বিরুদ্ধে আমি মামলা করতে সাহস পায়নি।’
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি মামার বেশকিছু জায়গা দখল করে বাবু সুপারি গাছের চারা রোপণ করে। মামা লুৎফর রহমান লাগানো গাছগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য বাবুকে বলেও কোন কাজ হয়নি। একপর্যায়ে ৬-৭ গাছ কেটে ফেলে তারা। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। বাবু মাদক ব্যবসায়ি হওয়ায় থানায় যেতে পারে না। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে ওসির বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দাখিল করে সে।
মীরপুর গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বিটাল, আবদুর রাজ্জাক, হাবিবুর রহমান, শফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকে জানান, বাবু এলাকার চিহ্নিত একজন মাদক ব্যবসায়ি। প্রায় রাতে তার বাড়িতে মাদকের আসর বসে। চলে দেহ ব্যবসাও। সেখানে এলাকার উড়তি বয়সের ছেলেদের আনাগোনা দেখা যায়। বাবুর হুমকির মুখে এলাকার লোকজন এসবের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। ভূমিহীন দাবি করলেও সম্প্রতি মেয়ের বিয়েতে বাবু তার জামাইকে এ্যাপাচি আরটিআর একটি মোটরসাইকেলসহ বিপুল পরিমাণ উপঢৌকন দিয়েছে। তদন্ত করে তার আয়ের উৎস জনসম্মুখে তুলে ধরার দাবিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন জানান, বাবু বেপরোয়া চলাফেরা করে। সে কোন কাজকর্ম করে না। অথচ আলিশান জীবন-যাপন করে। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে এলাকায় কয়েক ব্যক্তির সম্পত্তিও জবরদখল করে নিয়েছে। পারিবারিক বিরোধকে ইস্যু করে তার অবৈধ কর্মকা- আড়াল করতে ওসির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ভিডিওটি ভাইরাল করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
গনেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন মন্ডল জানান, মাদক ব্যবসায়ি ও ভূমিদস্যু বাবুর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাসহ তার কর্মকা- প্রতিহত করা হবে।
এদিকে ভাইরালে মাদক ব্যবসায়ি বাবুর শিষ্যরা পুলিশের বিরুদ্ধে নানান অশালীন মন্তব্য করলেও বিশিষ্টজনরা পাল্টা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। মন্তব্যে তারা লিখেছেন, সুচতুর বাবু নিজের মাদক ব্যবসাকে নিরাপদ করতে পুলিশকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। তবে, এ ধরনের ভিডিওতে বিচলিত না হয়ে মাদক নির্মূলে কঠোর ভূমিকা রাখতে পুলিশের প্রতি আহবান জানান সুধীজনরা।