ঝালকাঠির কাঠালিয়ার তারাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সহিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ভূয়া দাতা সাজিয়ে বিদ্যালয়ের ৩৫ শতাংশ জমি জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যত্র রেজিস্ট্রকৃত দান, বছরের পর বছর নামকায়স্থ এডহক কমিটি দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করাসহ দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রধান শিক্ষকের লাগামহীন এসব দূর্নীতি সে¦চ্ছাচারিতা এবং জুনিয়র শিক্ষক ভূয়া জমিদাতা পরিণয় হালদারের শাস্তি ও এর প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ মানিক মিয়া জমাদ্দার দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, তারাবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রফুল্ল কুমার হালদারের একমাত্র পুত্র পরিনয় হালদারের এ বিদ্যালয়ের জুনিয়ার শিক্ষক পদে চাকরি দেয়ার সুবাধে ও কমিটির সিদ্ধান্তে তিনি স্বেচ্ছায় গত ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়ের নামে নিরুপন দলিলের মাধ্যমে ৩৫(পয়ত্রিশ) শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। কাঠালিয়া সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল নং- ২৩৯৬ (তারিখ ২৬/১২/১৯৯৪)। যার খতিয়ান এস.এ. ৬৮৯ ও দাগ নং ১১৫৫, ১১৫৬ ও ১১৫৯।
উক্ত নিরুপনকৃত ৩০লক্ষ টাকা মূল্যের একই দাগ খতিয়ানের ৩৫(পয়ত্রিশ) শতাংশ জমি প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলামের যোগসাজসে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এ বিদ্যালয়ের জুনিয়র শিক্ষক পরিনয় কুমার হালদারকে ভূয়া দাতা সেজে (জমি না থাকা সত্বেও) গত ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারি তারিখ তারাবুনিয়া পুলিশ ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্রের নামে নিরুপন (রেজিস্ট্রি) করে দেন। যার দলিল নং- ৫৫। আর প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম খান নিজেই এ দলিলের সনাক্তকারী হয়েছেন। ওই জমিতে এখন দৃশ্যমান তারাবুনিয়া পুলিশ ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্রের বহুতল পাকা ভবন।
বিদ্যালয়ের দানকৃত জমিতে দুই লক্ষাধিক টাকার গাছ বিক্রির টাকাও আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দূর্ব্যবহার, গ্রন্থাগারিক পদে নিজের মেয়ে শিমু আক্তারকে দু'বার নিয়োগ প্রদান, প্রভাব খাটিয়ে গ্রন্থাগারিক ও করণিককে গণিতসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রুটিনে রাখা ও শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেটে বাধ্য করা, অর্থের বিনিময়ে প্রতিবছর নিষিদ্ধ ও নামসর্বস্ব কোম্পানির গাইড ও নোট বই পাঠ্যতে অর্ন্তভূক্ত করা এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বেশি মূল্যে এ বই কিনতে বাধ্য করা, উপবৃত্তি সুবিধেভূগী ছাত্রীর কাছ থেকে ৫শ করে টাকা আদায়, জেএসসি ও এসএসসির রেজিষ্ট্রেশন, ফরম পূরণ ও প্রবেশপত্রে অতিরিক্ত ফি আদায়, করণিকের যোগসাজসে ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষার্থীদের নাম পিতা-মাতার নাম ও জন্ম তারিখে ভূল দিয়ে সংশোধনের নামে টাকা আদায় ও আত্মসাৎ করা। এসএসসি ও জেএসসির সনদে ৫শ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম অধিকাংশ সময়ই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে বিভিন্ন দলালিসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর আসলেও দুই এক ঘন্টা পরে বাড়ি চলে যান বলেও অভিযোগ করেন ম্যানেজিং কমিটির সাবেক এ সভাপতিসহ আরোও অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক জানান, পুলিশের দালালিসহ চিন্থিত অপরাধীদের সাথে প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণে ভয়ে কেউই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক স্বার্থ হাসিলের জন্য তাঁর পছন্দের লোক দিয়ে নামকায়স্থ এডহক কমিটি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিদ্যালয় পরিচালনা করায় বিদ্যালয়টি দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে।
মো. বাহাদুর নামের এক অভিভাবক জানায়, আমার ছোট ভাই সাগর তালুকদারে গত এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে গেলে প্রধান শিক্ষক সহিদুল স্যার আমার নিকট ৫শ টাকা দাবি করলে আমি ৩শ টাকা দেই, কিন্তু বাকী দুইশত টাকার জন্য সে প্রবেশপত্র দেন নাই। প্রবেশপত্র নিতে কোন এত টাকা লাগবো এ নিয়ে বাকবিতান্ডার একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হন এবং ‘তুই জানতে কে’ এই বলে লোকজনের সম্মুখে আমাকে আচমকা একটি থাপ্পর মারেন। পরে উপস্থিত অভিভাবকরা তাকে শান্ত করেন। বিষয়টি ইউএনও’র হস্তক্ষেপে প্রবেশপত্র পেলেও লাঞ্চিত হওয়ার কোন বিচার পাইনি।
বিদ্যালয়ের জুনিয়র শিক্ষক পরিনয় কুমার হালদার বলেন, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের নামে আমি যে ৩৫ শতাংশ জমি দান করেছি, ওই দলিলে অন্য একটি খতিয়ানের উল্লেখ রয়েছে। তবে ওই খতিয়ানে জমির পরিমান বলতে রাজি হননি।
প্রধান শিক্ষক মো. সহিদুল ইসলাম খান তার বিরুদ্ধে আনীত দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের জমি অন্যত্র হস্তান্তর করার অভিযোগ সত্য নয়। পরিনয় হালদারের বাবা প্রফুল্লা হালদারের স্কুলের নামে দানকৃত ৩৫শতাংশ জমির অনেকাংশই খালে বিলীন হয়ে গেছে এবং অবশিষ্ট জমি বিদ্যালয়ের দখলে আছে।
স্থানীয় পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শিশির দাস জানান, প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতিতে স্কুলটি ধ্বংসের মুখে। পুলিশ ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্রের জন্য আমিসহ ৬জন দাতা এক একর পাঁচ শতাংশ জমি নিরুপন দলিলে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি। এর মধ্যে পরিনয় হালদার যে ৩৫শতাংশ জমি দিয়েছেন উহা সম্পূর্ণই বিদ্যালয়ের জমি। ওই দাগ খতিয়ানে পরিণয় হালদারের ওয়ারিশ সূত্রে বা নিজস্ব কোন জমি নেই। তাহলে কিভাবে তিনি জমি দিলেন। আর নদী বা খালে বিদ্যালয়ের কোন জমি বিলীন হয়নি। এমনিতেই বিদ্যালয়ে নামে যে জমি থাকার কাঁথা তার অর্ধেকও নেই। প্রধান শিক্ষক জেনে শুনে গোপনে ও যোগসাজসে এ জালিয়াতির কাজটি করেছেন। তদন্ত পূর্বক তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।