এইচএসসি পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতের প্রথমপত্রের উত্তরপত্র জালিয়াতির অভিযোগে নগরীর বিমানবন্দর থানায় ১৮ পরীক্ষার্থীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশিচত করে বিমানবন্দর থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান জানান, সোমবার শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ আনোয়ারুল আজিম বাদী হয়ে ১৮জন শিক্ষার্থী, বোর্ডের রেকর্ড সাপ্লায়ার গোবিন্দ চন্দ্র পালসহ ১৯জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের তথ্য এবং এ সম্পর্কিত কাগজপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে। হাতে পেলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে জালিয়াতির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। তবে বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে তদন্ত কমিটি। এরআগে উচ্চতর গণিতের প্রধান পরীক্ষক পিরোজপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, নিরীক্ষক নলছিটি ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আবু সুফিয়ান এবং পরীক্ষক মানিক মিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষক মনিমোহনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
নিরীক্ষক আবু সুফিয়ান জানান, বোর্ড থেকে দেওয়া উত্তরপত্রে যেভাবে অঙ্ক করা ঠিক সেভাবেই ওই ১৮ শিক্ষার্থীর খাতায় অঙ্ক তুলে দেওয়া হয়েছে। উত্তরপত্রে একটি অঙ্ক ১৩ লাইনে শেষ হয়েছে। ওই পরীক্ষার্থীদের খাতায়ও ঠিক একইভাবে ১৩ লাইনে অঙ্ক উঠানো। উচ্চতর গণিতে লিখিত ৫০ নম্বরের মধ্যে ‘ক’ অথবা ‘খ’ যেকোন গ্রুপ থেকে কমপক্ষে দু’টিসহ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। চারজন পরীক্ষার্থী ফাঁস করা উত্তরশিট দেখে সব অংকই একই গ্রুপ থেকে তুলে রেখেছে। ফলে তাদেরকে ৪০ নম্বর দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৪ জন ৫০ নম্বরের মধ্যে ৫০ পেয়েছে। তিনি আরও জানান, পরীক্ষায় একটি জটিল অঙ্ক এসেছে যা ভাল শিক্ষার্থীদের কষতেও কয়েক বার কাটাছিড়ে করতে হবে অথচ ওই ১৮ পরীক্ষার্থী এমন নিখুঁতভাবে অংকটি তুলে রেখেছেন যা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি প্রধান পরীক্ষককে অবহিত করা হলে তিনি (প্রধান পরীক্ষক) বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে খাতাগুলো নিয়ে যান। এরপরই বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। পরে বোর্ড চেয়ারম্যান ১৮ শিক্ষার্থীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উত্তরপত্রে জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে নেয় পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষার্থীরা বোর্ড চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন টাকার বিনিময়ে গোবিন্দ চন্দ্র পাল এ কাজটি করেছেন। এরপর ১৮ পরীক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত করে ওই শিক্ষার্থীরা যাতে আগামি তিন বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে তার ব্যবস্থা নেয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া জানান, তদন্ত চলছে। এরমধ্যে অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা হয়নি। প্রতিবেদন হাতে পেলেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার আগেই ফৌজদারী আইনে বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।