রাজশাহীর তানোরে স্বামী পরিত্যাক্তা ভূমিহীন স্বপ্নার স্বপ্নের ঘর ভেঙ্গে দেয়ায় তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু’র অপসারনের দাবিতে মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছেন নারীরা। (আজ) গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় তানোর উপজেলা মহিলা আ.লীগের ব্যানারে প্রায় ৩হাজারেরও বেশী নারীদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিলটি তানোর ডাকবাংলো থেকে বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক পদক্ষিন শেষে তানোর থানা মোড়ে ও উপজেলা পরিষদ চত্বরে পৃথক ২টি স্থানে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তানোর পৌরসভার ৩নং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মোমেনা খাতুন, চান্দুড়িয়া ইউপির সংরক্ষি নারী সদস্যা ফেরদৈসী খাতুন, তানোর উপজেলা মহিলা আ.লীগ সাধারন সম্পাদক সানোয়ারা পারভিন, কলমা ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সভাপতি সারমিন আক্তার পলি, কলমা ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সাধারন সম্পাদক শাহানাজ পারভিন, বাধাইড় ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সভাপতি নাজমা আক্তার, বাধাইড় মহিলা আ.লীগ সাধারন সম্পাদক মনোয়ারা খাতুন, পাঁচন্দর ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সভাপতি বিলকিস বানু, পাঁচন্দর ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সাধারন সম্পাদক সমিরন কিস্কু, সরনজাই ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সভাপতি মিনা খাতুন, সরনজাই ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সাধারন সম্পাদক সেফালী খাতুন, তালন্দ ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সভাপতি সামসুন্নাহার, তালন্দ ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সাধারন সম্পাদক আলেকজান বিবি, কামারগাঁ ইউনিয়ন মহিলা আ.লীগ সাধারন সম্পাদক জামেলা খাতুন, তানোর উপজেলা যুব মহিলা লীগ সভাপতি ডাক্তার বেলী খাতুনসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩হাজার নারী অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনের ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তানোর উপজেলার কলমা ইউপি’র ৪নং ওয়ার্ড মহিলা আ.লীগ সভাপতি স্বামী পরিত্যাক্তা ও ভুমিহীন নারী স্বপ্না আরা’র বসতবাড়ীসহ ঘর তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু’র নির্দেশে ভুমি অফিস কর্মচারীদ্বারা ভাংচুর, মালামাল লুটপাট গৃহগীন করার প্রতিবাদ এবং তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানুর অপসারন দাবিতে মারববন্ধন’ সকাল সাড়ে ৯টায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা এসে ডাকবাংলোতে জামায়েত হতে শুরু করলে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস থেকে বেরিয়ে চলে যান তানোর উপজেলার একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করার জন্য। ফলে নারীরা মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ সমাবেশ করার পর নারী উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে বেলা ২টা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে বসে থাকা অবস্থায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। এ ব্যাপারে স্বপ্না আরা বলেন, আমার ঘরের পার্শের একই জমিতে আরো ৪জন বাড়ি নির্মান করেছেন তাদেরটা ভাঙ্গা হয়নি শুধু আমার ঘরটি ভাঙ্গা হলো কেন? অন্যরা কেউ লীগের আবেদনও করেননি, কিন্তু আমি লীগের জন্য ভুমি অফিসে আবেদন করেছিলাম। স্বপ্না বলেন, আমার বাড়ি ভাঙ্গার আগে আমাকে কোন নোটিশ দেয়া হয়নি, হঠাৎ ভুমি অফিসের কর্মচারীরা গিয়ে আমার ঘর-বাড়ি ভাংচুর করে ইট সিমেন্ট টিন ও বালু বিলিয়ে দিয়েছেন এবং নিয়ে এসেছেন। আমার বাড়ি ভাঙ্গার আগে কেন আমাকে সময় দেয়া হলোনা ?, আমি আমার ক্ষতিপুরন ও তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানুর অপসারন চাই। স্বপ্না বলেন, ইউএনও’র পিওন আরিফ হোসেন আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা চেয়েছিলো, আমি দিতে পারিনি।
উল্লেখ্য, তানোর উপজেলার কলমা ইউপি এলাকার গংগারামপুর গ্রামে গংগারামপুর মৌজায়, জে-এল নং ৩৩, ১৯৭ নং দাগে ১নং খাস খতিয়ান ভূক্ত ৮২শতক জমি রয়েছে। ওই খাস জমি লীজ না নিয়েই গংগারামপুর গ্রামের সামশুল আলম, সোহরাব হোসেন, ইদুল, মুসলেম উদ্দিন দখল করে বাড়ি ঘর নির্মান করে বসবাস করছেন। ওই একই দাগের এক কোনে একশতকেরও কম জমিতে বেড়া ও টিন দিয়ে একটি ঘর করে গংগারামপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের কন্যা স্বামী পরিত্যক্তা ১সন্তানের জননী অসহায় ভূমিহীন নারী স্বপ্না (৩০) তার মা ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে গত ৮বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন। ঝড় ও বৃষ্টিতে প্রায় প্রতিবছরই ঘর ভেঙ্গে যায়। চলতি বছরেও ঝড়ে ঘরটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। ফলে ওই জায়গা টুকু লীজের জন্য তানোর ভূমি অফিসের নির্ধারিত ফর্মে একটি আবেদন করে বিভিন্ন জনের সাহায্য-সহযোগীতা নিয়ে গত প্রায় ১মাস আগে ওই বেড়ার ঘরটি ভেঙ্গে সেখানে ইট দিয়ে স্বপ্না তার স্বপ্নের একটি ঘর তৈরি করছিলেন। ঘরটি নির্মামের প্রায় শেষ পর্যায়ে হঠাৎ গত বুধবার ১৪ই আগস্ট/২০১৯ ইং তারিখ দুপুরে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পিওন আরিফ হোসেন তানোর ভূমি অফিসের কর্মকর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্তা ও পুলিশ ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বপ্নার নির্মানাধীন সেই স্বপ্নের ঘর ভেঙ্গে ইট ও রড নিয়ে আসেন এবং বালি ও টিন নির্দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেন। এ সময় স্বপ্না ২দিনের সময় চাইলে তাকে অশ্লিল ভাষায় গালাগালি করা হয়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পিওন আরিফ হোসেন টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নির্বাহী স্যারের নির্দেশে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাসহ পুলিশ নিয়ে ঘর ভাঙ্গা হয়েছে, এর বেশী কিছু আমি জানিনা। এ ব্যাপারে তানোর ভূমি অফিসের নাজির সাহিন আলম বলেন, স্বপ্না খাস জমিতে ইট দিয়ে ঘর নির্মান করছিলেন, গ্রামবাসীর অফিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে স্বপ্নার ঘর ভাঙ্গা হয়েছে। এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসর নাসরিন বানুর মোবাইলে একাধীকার কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।