সুজানগরের সাতবাড়ীয়া ঐতিহ্যবাহী ডিগ্রি কলেজের প্রবেশ পথের পাশে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় পাবনা-২আসনের প্রয়াত এমপি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আহমেদ তফিজ উদ্দিন মাস্টারের ম্যুরাল নির্মাণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ওই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গত সোমবারের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় পাবনায় কলেজের শহীদ মিনার ভেঙে পিতার ভাস্কর্য বানালেন এমপি শিরোনামে উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বলেও একই অভিযোগে প্রকাশ।
সাতবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এসএম শামছুল আলম জানান, আজ থেকে প্রায় ৩৫বছর আগে ওই কলেজের প্রবেশ পথের বামপাশে পরিত্যক্ত এবং সংকীর্ণ একটি জায়গায় ভাষাশহীদদের স্মরণে অপরিকল্পিত তথা ত্রুটিপূর্ণভাবে নামেমাত্র একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কালের পরিক্রমায় শহীদ মিনারটির পলেস্তরা খসে রড বের হয়ে যায়। তাছাড়া শহীদ মিনারটি কলেজে যাতায়াতের রাস্তা থেকে নিচু ভূমিতে অবস্থিত এবং সেখানে জায়গা সঙ্কুলান হয়না। ফলে বর্তমানে ভাষাশহীদদের স্মরণে ওই স্থানে আর কেউ পুষ্পমাল্য অর্পণ বা কোন অনুষ্ঠানাদি করতে যাননা। তিনি আরো জানান, ২০১৩সালে সরকারিভাবে কলেজ মাঠে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং ব্যয়বহুল একটি ভাষাশহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ একুশে ফ্রেব্রুয়ারি এবং স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ওই শহীদ মিনারেই পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং স্মরণসভাসহ এ-সংক্রান্ত অনুষ্ঠানাদি করে থাকেন। ফলে ওই শহীদ মিনারটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল বাছেত বাচ্চু জানান, শহীদ মিনারটি পরিত্যক্ত হওয়ায় ইতোমধ্যে কলেজের অর্থায়নে ভাষাশহীদদের স্মরণে কলেজের দক্ষিণ পাশে নতুন একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিত্যক্ত ওই শহীদ মিনার ভেঙে সেখানে প্রয়াত এমপি আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিৎ দেবনাথ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন একাজে স্থানীয় এমপি আহমেদ ফিরোজ কবিরের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আহমেদ তফিজ উদ্দিন স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রাণপুরুষ তথা একাধিকবার পাবনা-২আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য তথা উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। সেকারণে তার স্মৃতির স্মরণে কলেজের অব্যবহৃত ওই জায়গায় ম্যুরালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি ফজলুল হক জানান, শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলার পিছনে কোন হীন উদ্দেশ্য নেই। শহীদ মিনারটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। তার চেয়ে বড়কথা ওই স্থানে জায়গা সঙ্কুলান হতোনা। সেকারণে শহীদ মিনারটি ভেঙে একটি উম্মুক্ত জায়গায় দৃষ্টিনন্দন ভাষাশহীদমিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও এলাকার একটি কুচক্রিমহল শহীদ মিনার ভেঙে আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ম্যুরাল নির্মাণের যে বিষয়টি বিভিন্ন মহলে প্রচার করছেন সেটি রীতিমতো উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং গর্হিত কাজ। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন বলেন ষড়যন্ত্রকারীদের মাথাব্যথা জরাজীর্ণ শহীদ মিনার ভাঙা নিয়ে নয়, তাদের মাথাব্যথা প্রয়াত এমপি আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে। তিনি বলেন একটি পরিত্যক্ত জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠনিক প্রয়াত এমপি আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ম্যুরাল নির্মাণ করা কোন অপরাধ নয়। বরং যারা নির্মাণ করছেন তারা দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ তফিজ উদ্দিনের প্রতি যথাযথ মর্যাদা এবং সম্মান প্রদর্শন করছেন। আর যারা ম্যুরাল নির্মাণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন তারা কেবল আহমেদ তফিজ উদ্দিনকে নয়, প্রকৃতপক্ষে তারা স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছেন।