চলনবিলে বানার বাঁধ, সুতিজাল দিয়ে নির্বিচারে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী শিকার করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বিলের বিভিন্ন এলাকা ‘ইজারা’ দিয়ে এসব জলজ প্রাণী শিকারের ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি বিলের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাটোরের সিংড়ার অধিকাংশ এলাকা চলনবিলবেষ্টিত। বিলে বর্ষার পানি চলে আসায় এসব এলাকায় মাছ শিকারিদের তৎপরতা বেড়েছে। চলনবিলের রাখালগাছা, ভুলবাড়িয়া-লালপাড়া, সারদানগর, ধরমপুর ও নাগর নদের বিভিন্ন পয়েন্টে বানার বাঁধ এবং সুতিজাল দিয়ে ছোট-বড় মাছ, কাঁকড়া ও শামুক নিধন করা হচ্ছে। ১৮ আগস্ট রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের রাখালগাছা বিলের বজরাহার ব্রীজের মুখে প্রায় ১ কিলোমিটার অংশ বানার বাঁধ দিয়ে ঘেরা। সেখানে বানার বাঁধ দিয়ে প্রকাশ্যে মাছ শিকার করছে স্থানীয় ব্যক্তি জাহেদুল ইসলাম ও আবদুল করিম।
উপজেলার ১১ নম্বর ছাতারদীঘি ইউনিয়নের বাশারনগর-লালপাড়া এলাকায় নদী দখল করে বাঁধ ও সুতি দিয়ে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি সেন্টু মিয়া। ওই নদের ধরমপুর এলাকায় নদী দখল করে সুতি দিয়ে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি হুমায়ুন, মোস্তা ও বকুল হোসেন। এছাড়াও চৌগ্রাম ইউনিয়নের সারদা নগর এলাকায় ২টি বাঁধ ও সুতি দিয়ে মাছ শিকার করছেন ভূট্রু মিয়া ও স্থানীয় আ.লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একশ্রেণির স্বার্থাণেষী মহলের কেউ কেউ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে আবার কেউ কেউ দলীয় নেতা ও মৎস্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এসব অবৈধ বাঁধ ও সুতি দিয়ে মাছ শিকারে মেতে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায় না।
চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, চলনবিলের বিভিন্ন পয়েন্টে বানার বাঁধ ও সুতিজাল দিয়ে মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ ছোট পোকামাকড় ও জলজ প্রাণী শিকারে চলবিলের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা সকলকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’ তবে এখানে দীর্ঘদিন ধরে মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় এটা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এবিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অঃ দঃ) জহুরুল হক বলেন, তাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার বলেন, গত ২১ শে জুলাই নাগর নদের ওই ৪টি সুতির বাঁধ অপসারণ করা হয়েছিল। শুনেছি পরে আবার মেরামত করে সেখানে সুতি দেয়া হয়েছে। দ্রুতই আবার অভিযান পরিচালনা করে চলনবিলের বানার বাঁধ ও সুতিগুলো অপসারণ করা হবে।