ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পল্লীতে দুর্বৃত্তরা প্রায় শতাধীক বিঘা জমিতে রোপনে জন্য তৈরী করা কপি’র চারা রাতে অন্ধকারে কেটে নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার পথে বসায় উপক্রম হয়েছে। সাথে কপি’র জন্য তৈরীকৃত শতাধীক বিঘা জমির কপি আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানায় একটি জিডি হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে কোটচাঁদপুর উপজেলার সোয়াদী দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মাঠে সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায় ২০ থেকে ২৫ জনের কপি’র বীজতলা’র চারা ধারালো গাছী দা দিয়ে কেটে সাফ করে দেয়া হয়েছে। ওই বীজ তলার কাঁটা চারা বৃষ্টির পানিতে পঁচে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে।
ভুক্তভোগী ওই গ্রামের ৬২ বছর বয়স্ক আবদুল ম-ল এ প্রতিবেদককে বলেন- ঘটনাটি ঈদের আগের দিন (১১ আগষ্ট) রাতে ঘটায় কৃষি অফিস, থানা এবং সাংবাদিকদের জানাতে দেরী হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সকলেই কপি’র আবাদ করি নিজেদের বীজতলার চারা লাগিয়ে। জমিতে চারা লাগানোর পর বেশী থাকলে সে চারা বিক্রয় করে দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, এবার ১০ বিঘা কপি’র আবাদের জন্য আমি জমি প্রস্তুত রেখেছি। আমার মত সকলেই জমি প্রস্তুত করে রেখেছেন। চারা গুলি ঈদের পরের দিন থেকে লাগানো কথা। চারা নষ্ট না করে দিলে আমাদের সকলের এরইমধ্যে কপি’র চারা রোপন করা হয়ে যেত। আবদুল ম-ল বলেন, পাড়ার একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে ৪/৫ সন্ত্রাসী কপি’র চারা গুলি নষ্ট করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন আমরা যে সকল ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণে অর্থ, সহযোগীতা ও শ্রম দিচ্ছি শুধু মাত্র তাদের বীজতলার কপি’র চারা কেটে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। মসজিদ নির্মানের সাথে সম্পৃক্ত নেই পাশে সেই সব ব্যক্তিদের কপি’র বীজতলা’র চারা থাকলেও সে গুলি নষ্ট করেনি ওই সকল সন্ত্রাসীরা।
ওই গ্রামের মুকুল হোসেন বলেন, আমি ১বিঘা জমিতে কপি লাগানো জন্য ও চারা বিক্রির জন্য অতিরিক্র চারার বীজতলায় বীজ বোপন করে ছিলাম। সে গুলো কেটে সাফ করে দিয়েছে গ্রামের চিহৃত সন্ত্রাসীরা। আমাদের এ ক্ষতি পোষাবার নয়। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ অনেকেই জমি লীজ নিয়ে এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন তুলে কপি’র আবাদ করার জন্য বীজতলায় কপি’র বীজ বোপন করেছিল। রাতের অন্ধকারে ওই বীজ তলার চারা কেটে দেয়ায় এখন ২০ থেকে ২৫টি পরিবারের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সাথে প্রায় শতাধীক বিঘা জমিতে কপি চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এ শতাধীক বিঘা জমিতে এবার কপি’র করতে না পারলে কপি চাষীদের ক্ষতি’র পরিমাণ হবে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা।
দোড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস প্রতিবেদককে বলেন, কৃষকদের এ ধরণের ক্ষতি পোষানো কঠিন। আমি খবর পেয়ে ওই গ্রামে গিয়ে ছিলাম। এটা মানুষ রুপি পশুদের কাজ। এর সঠিক তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার। তা হলে ফসল কেটে নষ্ট করা বন্ধ হবে।
এ বিয়য়ে কোটচাঁদপুর কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন,
এ ঘটনা ওই ইউনিয়নে প্রায় ঘটে থাকে। আমার কিবা করার আছে বলুন ? বিষয়টি দেখার কথা পুলিশ প্রশাসনের। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা মিটিং-এ তুলেছি। ব্যক্তিগত ভাবে থানার ওসি সাহের এবং এসপি সাহেবকে বলেছি। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলেও কোন কাজ হয় না বলে আক্ষেপ করেন।
বিষয়টি নিয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মাহবুবুল আলম বলেন, এ বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। যে কারণে আমি নিজে ওই এলাকায় যাব। তারপর ব্যবস্থা। তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সাংবাদিক এসেছে ঃ
কপি চারা কাঁটা দেখতে সাংবাদিক এসেছে। বিষয়টি মূহুর্তের মধ্যে ওই এলাকায় চাউর হয়ে যায়। ফলে ওই গ্রামের প্রচুর মানুষ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মধ্যেও সাংবাদিকদের পিছু নিয়ে মাঠে যায়। তারা সাংবাদিকদের কাছে জোর দাবী করেন, এলাকার মসজিদ নির্মণকে কেন্দ্র করে এলাকার ৪/৫ চিহিৃত সন্ত্রাসী এ অপকর্মটি করেছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, সোয়াদী গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার মোকাম তলা নামক স্থানে প্রায় ৪বিঘা খাস জমি রয়েছে। এলাকাবাসী একত্র হয়ে বেশ কয়েক বছর আগে এ জমির দক্ষিণ পাশে দেড় বিঘা পরিমাণ জমি নিয়ে নামাজের জন্য ঈদগাঁর মাঠ তৈরী করেছে। জমিটির মধ্যেবর্তী স্থানে দাঁড়িয়ে আছে শত বছরের একটি বিশাল বট গাছ। বটগাছে নীচের অংশ টুকু এলাকাবাসী দরগাঁ হিসাবে জানে। তবে এটা কোন পীরের দরগাঁ তা কেউ বলতে পারিনি। এই জমির পূর্ব পাশে এলাকার মোশারেফ ম-লের ছেলে আশরাফ, খালেক ম-লের দুই ছেলে কামাল ও জামাল দখল করে বাঁশ লাগিয়েছেন। বর্তমানে ওই বাঁশ বিক্রয়কৃত অর্থ তাঁরাই ভোগ করেন। এদিকে ওই দক্ষিণ পাড়ায় মসজিদ না থাকায় সম্প্রতি এলাকার লোকজন ওই খাস জমি উত্তর প্রান্তে রাস্তার ধারে মসজিদ নির্মাণে উদ্যোগ নেন। বর্তমানে মসজিদটি নির্মাণাধীর রয়েছে। এলাকার লোকজন একমত পোষণ করেন এই খাস জমি থেকে যে অর্থ আসবে তা মসজিদের উন্নয়নের কাজে লাগানো হবে। এলাকাবাসী দাবী করেন এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি মোশারেফ ম-লের ছেলে আশরাফ, খালেক ম-লের দুই ছেলে কামাল ও জামালসহ এলাকার নূরু ম-লের ছেলে এনামূল ও সাব্দার ম-লের ছেলে জাহান আলী। এখনে যাতে মসজিদ না হতে পারে সে জন্য মসজিদ নির্মাণে যারা সরাসরি জড়িত তাদের কপি’র বীজতলা’র চারা কেটে দিয়ে অর্থ নৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার পাঁয়তারা চালিয়েছে ওই সকল সন্ত্রাসীরা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে তাদের বাড়ীতে গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী অতিদ্রুত তদন্ত পূর্বক দোষীদের গ্রেপ্তার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সেই সাথে অসহায় ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক সহয়তা দানের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।