বগুড়ায় জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটনের ব্যক্তিগত অফিসে হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারীরা ঘটনার সময় বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার দিবাগত রাত ১টা থেকে সোয়া ১টার দিকে শহরের নওয়াব বাড়ি সড়কে টিএমএসএস মহিলা মার্কেটের উত্তর পাশে অবস্থিত ওই অফিসে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে।
সঙ্গবদ্ধ হামলাকারীরা এ সময় অফিসের দরজা-জানালা এবং কিছু আসবাবপত্র ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।হামলার সময় ওই অফিসে কেউ ছিলেন না।
পুলিশ গুলি বর্ষনের বিষয়টি সন্দিগ্ধ উল্লেখ করলেও হামলার প্রকৃত কারণ এবং ওই হামলার সাথে জরিত সে বিষয়ে অবহিত হলেও তারা এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এটেছেন।
অন্য দিকে ধারনা করা হয়েছে অফিসটি মূলত্ব যুবলীগ নেতা শুভাশীষ পোদ্দার লিটনের খন্ডকালিন এবং ব্যক্তিগত অফিস হলেও ওই অফিসের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠোমো তৈরী করেছিলেন এলাকার বাসিন্দা এবং যুবলীগ নেতা চন্দন কুমার। খন্ডকালিন সময়ে যুবলীগ সভাপতি ওই অফিস ব্যবহার করলেও চন্দন কুমার ওই অফিসটি সার্বিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করে থাকেন।
অতঃএব তার সাথে বিরোধের কারণে ওই অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
এবিষয়ে এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা চন্দন কুমারের সাথে বগুড়ার বহুল আলোচিত যুবলীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা চকসুত্রাপুর এলাকার আবদুল মতিন সরকারের ছোট ভাই ঝুমুর ও তার ডান হাত সোহেল বাঁশ ফোড় এর সাথে বালু মহালের আধিপত্য এবং বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
আশ পাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ মোটা মুটি হামলার সময় এবং ধরন সহ হামলকারীদের বিষয়ে নিশ্চিত হলেও তারা আপাত্বত এ ব্যপারে সরাসরি কিছু বলা থেকে বিরত রয়েছেন এমনটি মনে করা হচ্ছে।
নিশ্চিত হওয়া গেছে, গত বুধবার দিবাগত রাত ১টা থেকে সোয়া ১টার মধ্য কমপক্ষে ১০টি মোটর সাইকেল যোগে ৩০/৩৫জন সশস্ত্র যুবক বগুড়ার নবাববাড়ী সড়কের সদর পুলিশ ফাঁড়ীর সামনে এসে দাঁড়ায়। এ সময় ফাঁড়ীর সামনে সব মোটর সাইকেল অবস্থান করলেও ২ মোটর সাইকেল সহ হামলাকারীরা পায়ে হেঁেট কয়েকজন ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় তারা সেখানে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং যুবলীগ সভাপতির অফিস ভাংচুর করে। পরে তারা আবারো গুলি ছুঁড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
অন্যদিকে শুভাশীষ পোদ্দার লিটন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যুবলীগ থেকে বহিস্কৃত বহুল আলোচিত আবদুল মতিন সরকারের ছোট ভাই ঝুমুরের নেতৃত্বে ২০/২৫জনের একদল যুবক তার অফিসে হামলা চালিয়েছে। তিনি জানান,বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে ২০/২৫জনের একদল সন্ত্রাসী যুবক তার অফিসে হামলা চালায়। তারা অফিসের দরজা-জানালা এবং আসবাবপত্র ভাংচুর করে। তিনি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে মতিনের (বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা) ভাই ঝুমুর এবং তার কয়েকজন সহযোগীকে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে।’
কি কারণে অফিসে হামলা চালানো হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে শুভাশীষ পোদ্দার লিটন ষ্পষ্ট করে কিছু বলেননি। প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন এবং সে তালিকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে- জড়িত এবং বিতর্কিত কাউকে রাখা হয়নি। ওই শ্রেণির লোকজন কিংবা চাঁদাবাজী, জুয়াসহ সমাজ বিরোধী সব কাজের বিরোধিতা করে থাকি- এতেও অনেকের ক্ষোভ থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।’
সদর পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফাঁকা গুলি বর্ষনের বিষয়টি সন্দিগ্ধ হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, সিসি ক্যমেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
বগুড়া সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি সার্বিক)এস এম বদিউজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার পর পর তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। হামলাকারীদের সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’ ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত থানায় কোন জিডি কিংবা মামলা করা হয়নি।
সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠেছে, সদর পুলিশ ফাঁড়ীর সামনে এবং যে সময়ে শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রাতের টহল পুলিশের একাধিক পার্টি মজুদ থাকার কথা সেখানে রাতের নিস্তব্ধ ভেঙ্গে এতগুলো গুলো মোটর সাইকেল ও তার আরোহীরা বুক উঁচিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক দিয়ে ঘটনাস্থলে এলো এবং তাদের মিশন শেষ করে একই ভাবে নির্বিগ্নে তার চলেও গেল রনপাহাড়ায় নিয়োজিত পুলিশের কোন পক্ষই তাদের চ্যালেঞ্জ করলো না, এর প্রকুত কারণ কি?
যদি তারা দেখেও থাকে তাহলে কেন ওই মোটর সাইকেল আরোহীদের চ্যালেঞ্জ করার মত সাহস তাদের ছিলনা? আরো প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে কি কোন পুলিশই ওই ঘটনার সময় নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলনা ? শহরটা ছিল সমপূর্ন অরক্ষিত ?