পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সাথে শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান এবার কলেজের ১৮ জন শিক্ষকের নামে পাবনার আদালতে মানহানী মামলা করেছেন। একইসাথে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন কর্মসূচীর বিরুদ্ধে পাবনা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আগামি ৭ আগস্ট এ বিষয়ে তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে বলে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোখলেছুর রহমান প্রদত্ত নোটিশে জানা গেছে। এতে করে শিক্ষকরা আবারো মাঠে নেমেছেন। অভিভাবকরা শংকিত হয়ে পড়েছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন চাটমোহরবাসী। অধ্যক্ষ কর্তৃক শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ও অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। শনিবার সকালে ক্লাস বর্জন করে কলেজ শহীদ মিনার চত্বরে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন,সহকারী অধ্যাপক কামাল মোস্তফা,সহকারী অধ্যাপক আঃ মান্নান,প্রভাষক আবুল কালাম আনসারী,লিলি আকতার,রাবেয়া সুলতানা,রেহানা সুলতানা,অফিস সহকারী আঃ রহমান,মানিক মোল্লা প্রমূখ।
শিক্ষকরা তাঁদের বক্তব্যে অভিযোগ করেন,কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে ও ষড়যন্ত্রমূলক ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করে হয়রানী করছেন। অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান কলেজ জাতীয়করণে বাধা সৃষ্টি করাসহ শিক্ষকদের পদ সৃজনে আত্তীকরণের ফাইল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এখনো পাঠাননি। তিনি ২২ জন শিক্ষককে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। ব্যাপক দূর্নীতির মাধ্যমে কলেজে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বক্তারা অধ্যক্ষের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানান। একইসাথে মামলা প্রত্যাহারসহ শিক্ষকদের পদ সৃজনে আত্তীকরণ ফাইল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠানোর দাবি জানান। বক্তারা আরো অভিযোগ করে বলেন,অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান নিজের অনিয়ম-দূর্নীতি ঢাকতে কলেজ সরকারি করণে বাধা সৃষ্টি করেছেন। দেশের সকল কলেজের পদ সৃজনের ফাইল নির্ধারিত সময়ে পৌঁছালেও চাটমোহর সরকারি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ সৃজনের ফাইল অধ্যক্ষের ষড়যন্ত্রের কারণে পৌঁছায়নি। শিক্ষক-কর্মচারী অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। শিক্ষকরা অতি সত্বর মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান অন্যথায় আগামীতে কঠোর কর্মসূচীর হুঁশিয়ারি দেন।
মানববন্ধনের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,আমি কোন মিথ্যা মামলা করিনি। শিক্ষকরা মানববন্ধনের নামে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করাসহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছেন।
কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষক ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন,মামলা দিয়ে শিক্ষকদের অধিকার খর্ব করা যাবেনা,দূর্নীতি ঢাকা যাবে না। তিনি অধ্যক্ষের দূর্নীতির বিচার ও তার অপসারণ দাবি করে বলেন মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এদিকে,আন্দোলনরত শিক্ষকরা অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে গত ১৩ জুলাই থেকে ক্লাস বর্জন শুরু করেন। ফলে কলেজের সকল ক্লাস বন্ধ থাকে। শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে ফিরে যায়। শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়াসহ লেখাপড়া বিঘিœত হতে থাকে। অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা দূর্নীতি ও অনিয়ম,শিক্ষকদের পদ সৃষ্টি ও প্রত্যায়নপত্রে মিথ্যে তথ্য প্রদান,প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এবং অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে টানা বিভিন্ন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ১৩ জুলাই শনিবার থেকে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি শুরু করেন। ১৮ জুলাই শিক্ষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমারের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে ইউএনও শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য আহবান জানান। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে শিক্ষকরা ২০ জুলাই থেকে ক্লাসে ফিরে যান। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমারসহ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়,ইউএনও এর ইন্ধনে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনসহ আন্দোলন করছেন। শিক্ষকরা জানান,তাঁদের এই আন্দোলনের সাথে ইউএনও মহোদয়ের কোন সম্পর্ক নেই। তাঁর ইন্ধন বা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোন সমর্থন নেই। অধ্যক্ষ মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেছেন মাত্র।
এখানে উল্লেখ্য,চাটমোহর ডিগ্রী (অনার্স) কলেজ সরকারিকরণ করা হলেও নানা অনিয়ম,অধ্যক্ষ-শিক্ষক দ্বন্দ্ব,অধ্যক্ষ-উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরোধ,থানায় জিডি,উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের ও শিক্ষক পদ সৃজনের আত্তীকরণ ফাইলগুলো নিরাপত্তা হেফাজতে থানায় রাখার কারণে শিক্ষার পরিবেশ মুখ থুবড়ে পড়েছে। শিক্ষক-কর্মচারী অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে লিফলেট বিতরণ,পোসটারিং করাসহ অবস্থান কর্মসূচী,প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে। ক্লাস বর্জন কর্মসূচীও পালন করেছেন। বিষয়টি গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত।