নুসরাত ৭ মাস মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় তার বাবা নুর আলী তাদের ফেলে চলে যায়। এরপর থেকে মা সীমা খাতুনই নুসরাতের একমাত্র ঠিকানা। সে এখন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ফয়লা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। ফুটফুটের চেহারার এ মেয়েটির নাকের পলিপাস অপারেশন করার পর পয়সার অভাবে এখন আর ওষুধ কিনতে পারছে না। মেয়েকে বাঁচাতে সীমা খাতুন পরের বাসায় কাজ শেষে বিকালে বেকারী থেকে ভাজা, বিস্কুট কিনে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে বেড়াচ্ছে। নুসরাতরা ফয়লা আজিজ মিয়ার ভাড়া বাসায় বসবাস করে।
শিশু নুসরাতের মা সীমা খাতুন জানান, নুসরাত ৭ মাস গর্ভে থাকা অবস্থায় তার স্বামী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার রায়পুর গ্রামের নুর আলী তাদের ফেলে চলে যায়। এরপর থেকে পরের বাড়ি কাজ করে মেয়েকে বড় করে তুলছেন। বর্তমানে সংসার চলে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে। পরের বাড়িতে কাজ করে কেউ ভাত খেতে দেয় আবার কেই দেয় না। তবু ও জীবন বাজি রেখে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরের বাড়িতে কাজ করে আর মেয়ের চিকিতসার জন্য বিকালে ভাজা ওবিস্কুট বিক্রি করে শহরের বিভিন্ন স্থানে।
তিনি জানান, নুসরাতের বয়স যখন ৩ বছর তখন তার নাকের পলিপাস ধরা পড়ে। কিন্তু টাকার অভাবে তার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারে না। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে চিকিৎসক অতি দ্রুতই তাকে অপারেশনের পরামর্শ দেন। পরের বাড়ি কাজের মাধ্যমে জমানো আর মানুষের নিকট হাত পেতে জোগাড় করা টাকায় ইতোমধ্যে নুসরাতের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এখন প্রতি সপ্তাহে তার ওষুধ বাবদ ১৮.শ টাকা প্রয়োজন। এভাবে চালাতে হবে কমপক্ষে ৩ মাস। ২ সপ্তাহ ওষুধ চালিয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহে টাকা না থাকায় ঔষধের ব্যবস্থা হয়নি। এদিকে নুসরাতের অপারেশনের স্থানে ক্ষত বেড়েই চলেছে। বাকি ওষুধ না খাওয়াতে পারলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে নুসরাতের। টাকার জন্য চোখের সামনেই নিজের সন্তানের এমন অবস্থা কোন মায়েই সইতে পারেন না। মা সীমা খাতুন এখন মেয়ের জন্য হতাশ হয়ে পড়েছে। কিভাবে মেয়ের চিকিতসা বা ওষুধ ক্রয় হবে।তিনি বলেন, নিজে পরের বাসায় কাজ করেন। টাকা প্রয়োজন তাই বাকি সময়ে মেয়েকে বাঁচাতে বেকারী থেকে কেক, বিস্কুট কিনে শহরের বিভিন্ন মহল্লায় বিক্রি করছে। তিনি এ অবুঝ অসহায় শিশুটিকে বাঁচাতে সকলকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
চারপাশে অসহায় মানুষের অভাব নেই। কিন্তু কিছু মুহুর্তে সমাজে এমন কিছু ঘটে যা মানুষকে নাড়া দেয়। নিজের সন্তানকে বাঁচাতে পরের বাসায় কাজের পাশাপাশি সারাদিন পায়ে হেঁটে বেকারীর তৈরীকৃত খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন মা। সন্তানকে বাঁচাতে একজন মায়ের এমন আকুতি অত্যন্ত কষ্টদায়ক।