‘মাদকের মত তামাকের ক্ষেত্রেও জিরো টলারেন্স নীতি প্রণনয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. মোস্তাফিজার রহমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘তামাকমুক্ত রংপুর নগরী বাস্তবায়ন’ শীর্ষক মতবিনিময় ও কর্মপরিকল্পনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ জানান।
সিটি মেয়র বলেন, তামাক দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিভিন্ন রোগে চিকিৎসা খাতে প্রতিবছর প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ অন্যতম। অধিকাংশ রোগ ধূমপানের কারণেই হয়ে থাকে। কাজেই রোগ যদি কম হয় তাহলে বাংলাদেশ দ্রুত স্বাবলম্বী হবে, এগিয়ে যাবে উন্নত রাষ্ট্রের পথে।
মেয়র আরও বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট গাইড লাইন রয়েছে। আজকের এই মতবিনিময় সভায় নগরীতে তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের গাইড লাইনকে আরও বেগবান করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর ৭৫ শতাংশ পাবলিক প্লেস ধূমপানম্ক্তু হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে পাবলিক প্লেসে দেদারছে ধূমপান হচ্ছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আন্তরিক। আমি আশা করবো, প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। পাবলিক প্লেসগুলো যদি সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে যায় তাহলে ধূমপান অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। যারা পাবলিক প্লেসে ধূমপান করবে তাদেরকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়ার বিধানটি জোড়ালো করতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে যদি কেউ পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে জরিমানা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন ব্যতিত অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনে তামাকমুক্ত সিটি গড়ে তোলার যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন তামাককে নিরুৎসাহিত করার জন্য আমরাও সেটি বাস্তবায়নে কাজ করতে চাই। আমাদের এখন কাজ হবে রংপুর সিটি করপোরেশন তামাকমুক্ত করা। তামাককে নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের মনোগ্রাম সম্বলিত বিভিন্ন জায়গায় ফেস্টুন লাগাতে পারি।’
তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এসিডির ব্যক্তিগত কোনো ইন্টারেস্ট নেই উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘তাদের ইন্টারেস্ট হলো মানুষকে সুস্থ রাখা, তামাকে নিরুৎসাহিত করা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইন না মানার প্রবণতাটা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে জরিমানার যে বিষয়গুলো রয়েছে আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে তা বাস্তবায়নে কাজ করব। আমাদের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন কিংবা সিটি কর্পোরেশনে নিজস্ব প্রশাসন সম্মিলিতভাবে বিষয়টি নিয়ে কাজ করলে তামাকমুক্ত নগরী গড়ে তোলা অনেকাংশে সহজ হবে বলেও জানান মেয়র।
রাজশাহীর উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা প্রদ্বীপ রায়ের উপস্থাপনায় ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহীনুর রহমানের পরিচালনায় ‘তামাকমুক্ত রংপুর নগরী’ শীর্ষক মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন দেন অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম শামীম। সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ কোয়ালিশনের রংপুরের ফোকাল পার্সন সুশান্ত ভোমিক স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি সিটি করপোরেশন এলাকায় তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মেয়রকে অনুরোধ জানান। সভায় প্যানেল মেয়র মো. সামসুল হক, মাহমুদুর রহমান, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ মো. নজরুল ইসলাম, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. আবদুল কাইয়ুম, প্রধান লাইসেন্স পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী, সহকারি প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান, বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া, প্রধান সহকারি নঈম উল হকসহ ৩৩ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১১ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, রংপুর সিটিকে তামাকমুক্ত সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে এসিডির পক্ষ থেকে ‘তামাকমুক্ত নগরী’ এর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা, সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পাবলিক প্লেস, পাবলিক পরিবহণ ও কর্মক্ষেত্রে তামাকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া; সিটি কর্পোরেশনের লোগো সম্বলিত সাইনেজ বিতরণ; পয়েন্ট অব সেলে বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা; শিশুদের দ্বারা তামাক পণ্য ক্রয়-বিক্রিয় বন্ধ; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক পণ্যের বিক্রয় বন্ধ; কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন; সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে এ-সংক্রান্ত বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি ও এর যথাযথ ব্যায় নিশ্চিত; অটো রিক্সাকে ধূমপানমুক্ত রাখতে লাইসেন্স প্রদানের সময় নির্দেশনা প্রদান, ইজি বাইক ও অটো রিকসার পেছনে করপোরেশন কর্তৃক স্টিকার প্রদর্শণের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।