নীলফামারী শহীদ জিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকরী দেয়ার নামে লাখ লাখ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি শিক্ষিত-অর্ধ শিক্ষিত বেকার যুবদের বিভিন্ন দফতর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী পাইয়ে দেয়ার নামে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করা অভিযোগে জানা যায়, শহীদ জিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ’র প্রতারণায় চাকরী প্রত্যাশিরা আজ পথে বসেছেন। প্রতিনিয়ত শত চেষ্টাতেও ফেরত পাচ্ছেন না প্রদত্ত অর্থ। উল্টো হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন দো-দন্ড প্রতাপশালী আবদুল মজিদ গং। তাঁর এই প্রতারনার খুঁটির জোর কোথায় এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ পর্যন্ত শিক্ষক আবদুল মজিদ বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১০জন শিক্ষিত বেকার যুবককে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কমপক্ষে অর্ধ কোটি টাকা। এছাড়া, ওই প্রধান শিক্ষক চাকরী থেকে অবসর নেয়ার আগে নিয়োগ নীতিমালা লংঘন তাঁর দু’জামাতা জোবায়দুর রহমান ও ছাইদুর রহমান এবং মেয়ে শামীমা আক্তার বানুকে দিয়েছেন নিয়োগ স্বীয় প্রতিষ্ঠানে। এদিকে নীলফামারী সদর উপজেলার দারোয়ানী গ্রামের আলাউদ্দিন শাহ্’র ছেলে ফজলার রহমান শাহ (২৬) শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রায়শই দল বদলকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে পারিবারিক পাঠশালায় পরিণত করেছেন। গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি ছিলেন পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি। তার স্ত্রী তাহেরা বেগম জামায়াতের মহিলা রোকন এবং ছেলে মোহাম্মদ আলী নূরানী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে আবদুল মজিদ রাতারাতি আওয়ামী লীগ নেতা বনে যান। বিগত ২০০৫ সালে ফজলার রহমান শাহকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নেন ৫ লাখ টাকা। কিছুদিন চাকরী করার পর আরও ৩ লক্ষ টাকা দাবী করেন ওই প্রধান শিক্ষক। টাকা দিতে না পারায় মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে ওই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আরো পাঁচজন চাকরী প্রত্যাশীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা। নীলফামারী শহরের বাবুপাড়ার সখিউদ্দিনের ছেলে গোলাম সারওয়ার মির্জাকে ২০০৮সালে ৫ লাখ টাকা নিয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ। মাত্র দু’বছর চাকরী করার পর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকেও বহিস্কার করা হয়। পরে ওই পদে বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে দু’জন প্রার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন আরও দশ লাখ টাকা। ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপানী ইউনিয়নের কাঁকড়া বাজার গ্রামের এবিএম আবদুল জব্বারের ছেলে আবদুল মজিদকে ২০০৫সালে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী দেয়ার নামে প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ কৌশলে হাতিয়ে নেন পাঁচ লাখ টাকা। চাকরী না পেয়ে তিনি টাকার জন্য ওই শিক্ষকের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়ে ফিরছেন। প্রতারণার স্বীকার হয়ে এসব চাকুরী প্রত্যার্শীদের মধ্যে ফজলার রহমান বাদী হয়ে শহীদ জিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদসহ ১৮জনকে বিবাদী করে নীলফামারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের হালিমুর রশিদ যাদুর স্ত্রী কালিকাপুর স্কুল এ- কলেজের বিএসসি (জীব বিজ্ঞান) শিক্ষিকা রোকাইয়া আক্তার ২০১৩ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে পদটিকে এমপিও করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেন। নীলফামারী সদর উপজেলার বড় বাজারের (শাখামাছা) ইসরাফিল হোসেনের ছেলে মোর্শেদ আযম চওড়া স্কুল এ- কলেজের কম্পিউটার প্রদর্শক পদে ২০০৫সালে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। ২০১৬ সালে কম্পিউটার প্রদর্শকের পদের অনুকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিল করে এনে দেয়ার অঙ্গীকারে তার কাছ থেকে নেয়া হয় ২ লাখ ৫০হাজার টাকা। কিন্তু আজও বিল করে এনে না দিয়ে সব টাকাই আত্মসাৎ করেছেন বলে মোর্শেদ আযমের বাবা অভিযোগ করেছেন। একটি জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নীলফামারী সদর উপজেলার শাহীপাড়ার সবনম আক্তারীকে নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে শরীরচর্চা শিক্ষক পদে ২০১১সালে নিয়োগ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ১ লাখ ৫০হাজার টাকা হাতিয়ে নেন ওই শিক্ষক। চাকরী প্রত্যাশী সবনম আক্তারী ২০১১সালের ১২মে প্রধান শিক্ষক বরাবর পুবালী ব্যাংক থেকে ৫০০/- টাকার ব্যাংক ড্রাফট করেন যাহার নং পিও ইউবিএল নং ৬৮১১৯৫৫। প্রতারিত সবনব আক্তারী চাকরী না পেয়ে বিভিন্ন সময়ে চাপ প্রয়োগ করে ৭৫হাজার টাকা তুলতে পারলেও বাকী ৮৫হাজার টাকা এখনও তুলতে পারেননি। কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভেড়ভেড়ী মাঝপাড়া গ্রামের একরামুল হকের ছেলে খালেকুজ্জামানকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন জেলা ভূমি অফিসে অস্থায়ী ভিত্তিতে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের কথা বলে আবদুল মজিদ ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়ক পদে মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে আসে এবং কিছুদিন পর আবদুল মজিদ একটি ভূয়া নিয়োগপত্র খালেকুজ্জামানকে এনে দেন। যা ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শোয়াইব আহম্মেদ খান স্বাক্ষরিত যার স্মারক নং-৩১.০০.০০০০.০৪২.৪১.১৪২.১৬/৪০৮ তাং-৯/১১/২০১৬ ইং মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয় নীলফামারী জেলা প্রশাসককে। নীলফামারী সদর উপজেলার দেবীডাঙ্গা গ্রামের ক্ষিতেন রায়ের ছেলেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন জেলা ভূমি অফিসে অস্থায়ী ভিত্তিতে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের কথা বলে আবদুল মজিদ ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। নীলফামারী সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের আরাজি দলুয়া গ্রামের আলহাজ¦ সুলতান আলীর ছেলে আশিকুর রহমানকে ২০১৪ সালের জুন মাসে নতিবাড়ী একরামিয়া দাখিল মাদ্রাসার শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফ আলীকে ৩ লক্ষ টাকা এবং সহকারী শিক্ষক পদটিকে এমপিও করার জন্য আবদুল মজিদ ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু চাকরী প্রত্যাশী ওই হতভাগার কপালে মেলেনি চাকুরী। উপরন্ত টাকা চাইতে গেলে আবদুল মজিদের সন্তান ও জামাতা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনিভাবে নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের দরবেশপাড়া গ্রামের আকতারুজ্জামানের স্ত্রী তাইবুন নাহারকে নির্বাচন কমিশনের অধীন পরিদর্শক পদে চাকরী পাইয়ে দেয়ার জন্য ৩ লাখ ৫০হাজার টাকা চুক্তি করেন আবদুল মজিদ। মৌখিক পরীক্ষার জন্য ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ৩৫ হাজার টাকা নিলেও আজও পরীক্ষার দিন-তারিখ ঠিক হয়নি। পাওনা টাকার জন্য ধর্ণা দিলেও নানান ভাবে হয়রানী করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাইবুন নাহার।