রাজশাহী রেলের লেভেল ক্রসিংগুলো যেন এক একটি মৃত্যু ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেইটম্যান কিংবা সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড না থাকায় অহরহ ঘটছে এ দুর্ঘটনা। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, যেসব লেভেল ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটছে সেগুলোর বেশিরভাগের অনুমোদন নেই। অনুমদিত সবগুলোতেও নাই গেটম্যান। ফলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণেই রেলের ক্রসিংগুলো একেবারেই মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
পশ্চিম রেলের এসএসএই/ওয়ে রাজশাহীর তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের ৭১৪টি রেলক্রসিং-এ কোন গেটম্যান নাই। এসব স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙ্গানো আছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ দাবী করলেও অধিকাংশেই দেখা যায়নি। এছাড়াও পশ্চিম রেলের ৩৩৯টি রেলক্রসিংয়েরই নেই কোনো বৈধতা। যে কারণে দেওয়া হয়নি সতর্কবার্তা। ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই যানবাহনগুলো পারাপার হচ্ছে।
এছাড়াও রাজশাহী মহানগরীতে ২৬টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ১৭টির। তবে মহানগরীর চারখুঁটার মোড়ে বৈধ গেট থাকলেও নেই কোনো গেটম্যান। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ৮৭টি লেভেল ক্রসিংয়ের (গেট) মধ্যে অনুমোদিত ২৫টি ও অনুমোদনহীন ৬২টি। যেগুলোর গেটম্যান না থাকলেও অনুমোদিত ক্রসিংগুলোতে বিধি অনুযায়ী সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড থাকার কথা, কিন্তু নেই। কোথাও থাকলে দীর্ঘদিনের পুরনো ওইসব সাইনবোর্ড রঙ না করার কারণে লেখাগুলো অস্পস্ট হয়ে যাওয়ায় পথচারীর চোঁখেই পড়ে না। তবে ঝুকিমুক্ত চলাচলের জন্য নিজেদের মতো করে রেলক্রসিং তৈরি করেছেন কোনো কোনো এলাকাবাসী।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, পশ্চিম রেলের আওতায় লেভেল ক্রসিং রয়েছে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৩৬৫টি। এর মধ্যে ট্রাফিক বিভাগের আওতায় পরিচালিত লেভেল ক্রসিং সংখ্যা ২৯৮টি। এগুলোর সবগুলোই অনুমোদিত এবং গেটম্যান রয়েছে। আর এ অঞ্চলের ২ হাজার ৬৭টি রেলক্রসিং দেখভাল করছে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৪টি অনুমোদিত। এগুলোর মধ্যে গেটম্যান আছে মাত্র ৩১৯টিতে।
সূত্র জানায়, ট্রাফিক বিভাগের ২৯৮ রেলক্রসিংয়ে ১৭৩টি গেটম্যান পদে কর্মরত ১২৩ জন। তবে ২৮৭ জন অস্থায়ী কর্মী (টিএলআর) দায়িত্ব পালন করছেন। আর প্রকৌশল বিভাগের ৩১৯ রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানের মঞ্জুরিকৃত পদ ১৮৯টি। যেখানে কর্মরত রয়েছেন ৯৭ জন। বাকি ৯২ পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। এখানেও ২৯২ জন টিএলআর দায়িত্ব পালন করছেন। পদ শূন্য থাকায় দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (পিঅ্যান্ডডি) মোস্তাফিজুর রহমান দাবী করে বলেন, ‘অন্তত অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংগুলোর সুরক্ষায় কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। তবে অবৈধ এবং গেটম্যান নেই এমন লেভেল ক্রসিংগুলোও সুরক্ষার আওতায় আসছে। এরই অংশ হিসেবে লেভেল ক্রসিং গেট পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে ২০১৫ সাল থেকে। এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে ৩২৬টি রেলক্রসিং। এই প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৫৩টি অবৈধ রেলক্রসিংয়ের। এ ছাড়া ২০৪টি রেলক্রসিংয়ে দেয়া হয়েছে গেটম্যান। প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রত্যেক রেলক্রসিংয়ের মানও উন্নয়ন করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই কিছুকিছু রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নাই। কিন্তু অস্থায়ী লোকবল নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে অসচেতনতার কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। যে কারণে সচেতন হওয়া জরুরি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর একটি অনুমোদিত রেলক্রসিং-এর গেইটম্যান অভিযোগ তুলে বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলক্রসিংগুলোর দিকে তেমন কোনো নজর দেন না। নগরীর মধ্যে অনেক রেলক্রসিং আছে যেগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় কম জনবল আছে। প্রতি আট ঘণ্টায় একজন করে গেটম্যান থাকার কথা থাকলেও অনেক রেলক্রসিং-এ আছে দুইজন করে। সম্প্রতি রেললাইন সংঙ্কার হওয়ার কারণে নগরীর মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচলের গতি বেড়েছে। যে কারণে প্রায় সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।’
এসএসএই/ওয়ে রেলওয়ে রাজশাহীতে কর্মরত পরিমল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ‘যেসব রেলক্রসিং অবৈধ সেগুলোতে নিজ দায়িত্বে পার হওয়ার মতো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডে দেওয়া থাকে। ওইসব রেলক্রসিং দিয়ে সাধারণ পথচারী তাদের নিজের দায়িত্বে দুইপাশ ভালোভাবে দেখে পার হতে হবে। এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রেলওয়ে কোনো ধরণের দায়ভার নেবে না বলেও জানান তিনি।’