বড়াইগ্রামের আহমেদপুর এম.এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ে সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে চারজন শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫ সালের আগে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও সম্প্রতি এসব শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে যোগদান করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় একজন ইউপি সদস্য। এদিকে, সোমবার বেলা ১১টার দিকে আহমেদপুরে এলাকাবাসী এ অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধনের উদ্যোগ নিলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা পাল্টা মানববন্ধনের ডাক দেয়। এ ব্যাপারে পাল্টাপাল্টি মাইকিং করলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে দুপক্ষের মানববন্ধনই বন্ধ করে দেয়।
লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ-এনটিআরসিএ’র অধীনে চলে যায়। এরপরেও গোপনে বিধি বর্হিভূতভাবে পেছনের তারিখের ভুয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চার শিক্ষক নিয়োগ দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর দুই বছর অতিরিক্ত মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুনে প্রধান শিক্ষক শুধাংসু সরকার অবসরে যান। এরপর রবিউল ইসলাম নামে একজন প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তার মৃত্যুতে চলতি বছরের ১৪ জুন বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আকবর আলী প্রধান শিক্ষক হন। পর দিন ১৫ জুন দীর্ঘ ৪ বছর অনুপস্থিত থাকার পর চারজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসা শুরু করেন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী ইউপি সদস্য ফেরদৌস আলম বলেন, এলাকাবাসী জানেন না, শিক্ষকরা জানেন না, কবে পত্রিকায় সার্কুলার হয়েছে, কবেই বা নিয়োগ বোর্ড হয়েছে। ওঁরা পূর্বের এক নিয়োগ বোর্ডের কথা বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে চার শিক্ষকের নিয়োগ বৈধ করার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক এটাই আমাদের দাবী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানান, আমরা এই চারজন শিক্ষককে কোন দিন স্কুলে দেখিনি। তাদের নিয়োগের ব্যাপারেও কিছু শুনিনি। মাস দেড়েক আগে থেকে দেখছি তারা স্কুলে এসে ক্লাস নিচ্ছেন।
এদিকে, সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে কিভাবে তাদের নিয়োগ হলো, কেনই বা দীর্ঘ চার বছর পর বিদ্যালয়ে আগমণ তা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি চার শিক্ষক সীমা রানী, বিজয় কুমার, রেবেকা সুলতানা ও মৌসুমী নিগার। নিয়োগ ব্যাপারে কথা বলতেও তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি সাবেক প্রধান শিক্ষক শুধাংসু সরকার এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলী আকবরও নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। নিয়োগ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র বিদ্যালয়ে নেই বলেও জানান বর্তমান প্রধান শিক্ষক।
তবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি জানান, আমি এমন ভুল করবো না যে, আমাকে কেউ প্রশ্নের সম্মুখিন করতে পারে। নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা কোর্টে যেতে পারে। কোর্ট প্রমাণ করবে নিয়োগ সঠিক কিনা।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, বিধি লঙ্ঘন করে চার শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।