শেরপুরের সোহাগপুর গণহত্যা দিবসে শেরপুর পুলিশ বিভাগের আয়োজনে শহীদ জায়াদের সংর্বধনাসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বিধবাপল্লীর শহীদদের গণকবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা গণকবরের সামনে শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। পরে পুলিশ সুপার গণকবরের একপাশে বৃক্ষ রোপন করেন।
দুপুরে গোলঘরে এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নালিতাবাড়ী থানার ওসি আবুল খায়ের, সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যণ ট্র্রাষ্ট্রের সাধারন সম্পাদক জালাল উদ্দিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ মানুষের প্রতি দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, সোহাগপুরের সূর্যসন্তানদের নাম ও আত্মত্যাগের কথা বাংলাদেশ ও পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সোহাগপুরের শহীদ জায়াদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দিয়েছে। পাকা ঘর করে দিয়েছে। সারা পৃথিবীতে এখন সোহাগপুরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। এ সরকার না থাকলে এসব সম্ভব হতো না।
এরপর জীবিত ২৪ শহীদ জায়াকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে তাদের হাতে শাড়ী ও উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এ সময় জীবিত ২৪ শহীদ জায়াসহ ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই নিহত শহীদদের স্বজনরা গণকবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। শহীদ জায়া ও স্বজনদের কান্নায় এ সময় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। বিধবা হাফিজা বেওয়ার চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন “ ওইদিন আমার বাড়ীতে রক্তের নদী বইছে। সকালে কিছু বুঝার আগেই পাকবাহিনী ও দালালরা বাড়ীতে ঢুইক্কা চোখের সামনে স্বামীরে গুলি কইরা মারল। স্বামীর লাশের ওপর থেইক্কা কোলের ছেলেটারে নিয়া আছাড় মারল। তারপরে গুলি কইরা ঝাঁঝরা কইরা দিল। আমার দেওররে যহন গুলি করল তহন বাড়ীর উঠানে রক্ত আর রক্ত। স্বামী সন্তানের মাইরা আমার উপর চলে নির্যাতন। ৫০ বছর আগের ওই ঘটনা মনে হইলে ঠিক থাকবার পািরনা।”
উল্লেখ্য, শেরপুরের নালিতাবাড়ী কাঁকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই সকালে পৈশাচিক গণহত্যা চালায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী। এদিন ওই গ্রামের ১৮৭ জন পুরুষ মানুষকে হত্যা করে ঘাতকের দল। ৬২ জন নারী সেদিন বিধবা হন।