কিশোরগঞ্জ পৌরসভাসহ জেলার ৮টি পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারিরা নাগরিকসেবা বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার কারণে রাস্তা-ঘাট এখন আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লার দুর্গন্ধে নাগরিকগণ রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ময়লা আবর্জনার স্তুপে দুর্গন্ধ বেড়েই চলেছে।
পৌরসভার পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় নাগরিকগণ নিত্যদিনের গোসল ও কাপড়চোপড় ধোঁয়া নিয়ে পড়েছেন অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। সুপেয় পানির জন্য তাদের যেতে হচ্ছে বাইরে। অনেকেই বোতলজাত পানি কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন।
সড়কবাতি বন্ধ করে দেয়ায় রাতের রাস্তাঘাটে থমথমে অন্ধকার, ভূতুড়ে পরিবেশ। এ সুযোগে চুরি ছিনতাইয়ের আতঙ্কে রাতে চলাফেরা সীমিত করে দিয়েছেন শহরবাসী। ইতোমধ্যে কয়েক স্থানে প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাই ও চুরির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার দাবিতে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ও ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি চলছে। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবেই কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় সব ধরণের সেবা বন্ধ রয়েছে।
নাগরিকদের সেবা বন্ধ করে দিয়ে এ ধরণের আন্দোলনের কারণে পৌরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। শহরে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাতে লাইট বন্ধ থাকায় চুরি ছিনতাইয়ের আতঙ্কে নাগরিকরা তাদের চলাচল সীমিত করে দিয়েছেন।
এসবের প্রতিবাদে জেলা কমিউনিস্ট পার্টি বুধবার (২৪ জুলাই) শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
পৌরবাসীরা জানিয়েছেন, নাগরিকদের জিম্মি করে এ ধরণের ‘অনৈতিক’ আন্দোলন বন্ধ না হলে প্রয়োজনে মেয়র-কাউন্সিলর ও পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবেন।
কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রাস্তা ঘাটের মোড়ে ও বাসা বাড়ির আঙ্গিনায় ময়লার স্তুপে ভরে গেছে। এসব ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। যাত্রীরা নাক-মুখ চেপে চলাচল করতে হচ্ছে সর্বত্রই।
অনেকেই ভাগাড় নরসুন্দা নদীতেও ফেলছেন শহরের ময়লা-আবর্জনা। শুধু তা-ই নয়, কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের মেডিক্যাল বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে শহরে। এসব কারণে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে পৌরবাসী। শহরে যে কয়টি বাজার রয়েছে সেখানকার অবস্থা আরো শোচনীয়। সব মিলিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নিয়ে বসবাস করছে শহরবাসী।
পৌর নাগরিক বলেন, ‘পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দাবিদাওয়া থাকতে পারে। সেটা সরকারের কাছে। এজন্য পৌরবাসীকে জিম্মি করে আন্দোলনের নামে যে নৈরাজ্য চলছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া বলেন, নাগরিকদের জিম্মি করা আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিতে পারি না। কারণ আমরা জনগণের প্রতিনিধি। আন্দোলন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করছেন। আমরা যারা মেয়র কাউন্সিলর, আমরা এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত নই। কিশোরগঞ্জে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমি সোমবার থেকে পানি সরবরাহ চালু করেছি। একা আমার পক্ষে সব সেবা চালু করা দুরুহ ব্যাপার। তিনি আরও বলেন, এ আন্দোলন শুধু কিশোরগঞ্জে না সারা দেশেই হচ্ছে। আশা করছি কেন্দ্রীয়ভাবে একটা সমাধান হবে।