বগুড়ায় অব্যাহত ভাবে যমুনা নদীতে পানি কমছে। অন্যদিনে বাঙ্গালী নদী সহ জেলার অধিকাংশ নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবতিৃত রয়েছে।
গত কয়েক দিনে যমুনার পানি কমে সোমবার বিকাল পর্য়ন্ত বিপদ সীমার ৪৩ সেঃ মিঃ উঁচু দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিনে বাঙ্গালী ও করতোয়া সহ জেলার বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে জেলার শেরপুরে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবার খবর মিলেছে। গত কয়েক ঘন্টায় বাঙ্গালী নদীর পানি অব্যাহত ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদ সীমার অনেক উঁচু দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিতে গত ১৩জুলাই থেকে লাগাতার বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ী ঢলে যমুনা নদীতে অস্বাভাবিখ ভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। পানি একসময় স্বরন কালে ষব রের্কড ভেঙ্গে বিপদ সীমার প্রায় ১২ সেন্টি মিটার উঁচুতে পৌছে যায়। জেলার ৩উপজেলা সারিয়াকান্দি ,সোনাতলা ও ধুনটের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ বন্যকবলিত হয়ে পড়ে।প্রায় ৬হাজার হেক্টর জমির ফসল সমর্পূন ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে নদীর পানি কমলেও গোটা অঞ্চলে তীব্র খাদ্র সংকট এবং খাবার পানির সংকট দেখা দেয়েছে। বন্যাবকলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে বর্নার্তদের মধ্য সরকারী ভাবে বিতরন কৃত ত্রান সামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্পূর্ব বগুড়ায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ এবং জীবন রক্ষাকারী ওষধ। এদিকে পাশাপাশি গবাদি পশু খাদ্য পরিস্থিতিও উদ্বগজনক বলে জানা গেছে।
এদিকে গত কাল ২১ জুলাই (সোমবার) বিকেলে বগুড়া সার্কিট হাউসে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মুহাঃ ফয়েজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মো. এনামুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমও স্থানীয় সংসদ্য সদস্য আবদুল মান্নান এমপি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন।
সভায় বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েক আহম্মেদ জেলায় চলতি বন্যা পরিস্থিতি সমপর্কে ব্রিফিংকালে জানান, বর্তমানে জিআর খাতে ১৮৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ অর্থ ৫০ হাজার টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। এই অর্থ ও ত্রাণ দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। তিনি বর্ন্যাতদের জন্য অন্যান্য বরাদ্ধ এবং গোবাদী পশুর জন্য অতিরিক্ত বরাদ্ধের কথা বলেণ। তিনি আরো জানান বাঙালি ও যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের ১৭৯টি গ্রাম।নদী ভাঙনের কারণে এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ২০৫টি ঘরবাড়ী। সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ৯৫০টি ঘরবাড়ী আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৬৯২ জন বানভাসি মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ে নেওযভর পাশাপাশি বাঁধে আশ্রড নিয়েছে ১১ হাজার ৬০০ জন বন্যা দুর্গত।
বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের তরফে অতিরিক্ত চাহিদা হিসেবে জিআর ৩০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ অর্থ হিসেবে ২০ লাখ টাকা, শুকনো খাবার আরও পাঁচ হাজার প্যাকেট, ৪ হাজার পিস তাঁবু, ভারী পলিথিন ৮ হাজার পিস, গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ৮০ মেট্রিক টন পশুখাদ্য কিংবা সমপরিমাণ অর্থ, শিশু খাদ্য এবং আনুষঙ্গিক ব্যায় নির্বাহের জন্য বাড়তিত অর্থ বরাদ্দের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ৭১৭ মেট্রিক টন জিআর চাল, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তা বরাদ্দ দেয়া আছে সাড়ে ১১ লাখ টাকা। প্রয়োজনে আরও ত্রাণ ও অর্থ বরাদ্দ ছাড় করা হবে বলে জানান তিনি।
এসময় প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বরেন প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং উজান থেকে আসা বন্যার পানি ঠেকানো যাবে না। কিন্তু আমরা খেয়াল রাখবো বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে কমিয়ে আনা যায়। তিনি এ সময় জানান, জেলার জন্য সরকারী ৫০০ পিস তাঁবু পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে প্রয়োজনে আরো শুকনো খাবার ও তাঁবু পাঠানো হবে।
সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালযের উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, বগুডার বাঙালি, নাগর ও যমুনা নদীর ভাঙন রোধ করতে সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে জেলায় বন্যার ঝুঁকি কমে যাবে।