প্রায় ১০ বছর আগে গ্রিন বাংলাদেশ নামক একটি কোম্পানির কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ অধিক লাভের আশায় পাম চাষ শুরু করেন। কোম্পানির লোভনীয় কথায় এ এলাকার কৃষকরা গুরুত্বসহ কারে পাম চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সারা বছর প্ররিশ্রমের পর এখন গাছে গাছে থোকা থোকা পাম ফল। ভালো ফলন পেয়ে কৃষকরা খুবই খুশি। কিন্তু এ খুশি যে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কপালে। কারণ এ ফলের সঠিক প্রক্রিয়াজাত করণ এবং বিপণন পদ্ধতি জানা নেই অত্র এলাকার কৃষকদের। এদিকে গাছ লাগানোর এক বছর পর গ্রিন বাংলাদেশ নামক কোম্পানির প্রতিনিধিরা উধাও হয়ে যায়। তাই এ ফল নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন উপজেলার পামচাষীরা। সে সময় কোম্পানির লোকজন এলাকার কৃষকদের অনেক লোভ লালসা দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাম্প কাছ এলাকার কৃষকরা রোপন করে পড়েছে মহা বিপাকে।
উপজেলার ভাতঘরা গ্রামের পামচাষী মাহবুব জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে পাম চাষ করেছেন। লাগানো গাছগুলো এখন পরিপূর্ণ ফল দিতে শুরু করেছে। এখন পাম ভাঙিয়ে তেল বের করার পালা, আর সেখানেই বিপত্তি। পাম ভাঙানোর কোনা মেশিন না থাকায় এবং চাষীরা পাম প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে পরিচিত না হওয়ায় সঠিক প্রক্রিয়ায় পাম থেকে তেল উতপাদন অথবা পামবীজ বিপণন করতে পারছেন না। বর্তমানে এ গাছথেকে কোন উপকারে আসছে না। বরং জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা।
কালীগঞ্জ উপজেলায় গ্রিন বাংলাদেশের কাছ থেকে বিভিন্ন এলাকার চাষী প্রায় ৮০হাজার পাম চারা ক্রয় করে রোপণ করেন। ফল আসায় আনন্দিত হয়েছিলেন চাষীরা কিন্তু সেই আনন্দ বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। কারণ গাছে ফল থাকলেও ফলের ক্রেতা নেই।
পামচাষী মিজানুর রহমান জানান, তিনি গ্রিন বাংলাদেশ নামক কোম্পানির কাছ থেকে একটি গাছ ৮শ’ টাকা দরে ৪০টি পাম গাছ ক্রয় করেছিলেন। কোম্পানির প্রতিনিধিরা ৩ বছর পরিচর্যা করবেন এবং ফল এলে তা বিক্রির ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু গাছ লাগানোর এক মাস পর কোম্পানির প্রতিনিধিরা গাঢাকা দেয়। বড় ঘিঘাটি গ্রামের আরিজ মিয়া জানান, তিনি ২০টি পাম গাছ ক্রয় করেন ২২০ টাকা দামে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন পাম বাগানে। গাছে ফলও এসেছে কিন্তু ফলের ক্রেতা নেই। গাছ কেটে অন্য কিছু করবেন, না রেখে দেবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। শুধু মাহবুব, মিজান, আরিজ নন, উপজেলার দুলাল, মুন্দিয়ার তাজুল, একতারপুরের মুক্তার হোসেন, ডা. মোহাম্মদ, বাবরা গ্রামের তোরাব আলী, নিশ্চিন্তপুরের টিটো, পান্তাপাড়ার ওমর ফারুক, বারবাজারের আরশেদ আলীসহ বিভিন্ন এলাকার চাষীও একই সমস্যায় ভুগছেন। চাচড়া মাধমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোলাইমান হোসেন জানান, ২০১০ সালে ১ বিঘা জমিতে পাম্প গাছ রোপন করেছিল। সে সময় ১৪ হাজার টাকা ব্যায় করে চারা ক্রয় করেছিলেন। দীর্ঘ দশ বছরে ও সোলাইমান কোন লাভ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি পাম্প গাছ কেটে সাবাড় করেছেন। এভাবে অধিকাংশ কৃষকরা তাদের ফসলি জমিতে পাম্প গাছ রোপন করে কোন লাভ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কেটে ফেলছে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, কালীগঞ্জে কি পরিমাণ পাম চাষ হয়েছে, তার সঠিক হিসাব নেই। এমনকি পাম চাষ করার জন্য কোনো কৃষককে উৎসাহিত করা হয়নি। বর্তমানে যারা পাম চাষ করেছেন, তারা মেশিনের অভাবে তেল তৈরি করতে পারছেন না। কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, পাম তেল তৈরির মেশিনের দাম প্রায় ১ কোটি টাকা এবং মেশিনটি মালয়েশিয়া থেকে কিনে আনতে হয়। এ মেশিন বাংলাদেশে পাওয়া যায় না যে, কারণে পাম্প ফল থেকে তেল বের করা যায় না। গ্রিন বাংলাদেশ নামক কোম্পানি কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের সাথে প্রতারনা করেছেন। এত করে কৃষকদের ফসলি জমি গুলিতে পাম্প গাছ রোপন করে তাদের জমি গুলিতে কোন ফসল রোপন করতে পারেনি। এভাবে ১০ বছর করে জমিতে পাম্প গাছ রোপন করাছিল।