সরকার দেশের উন্নয়নে সকল উন্নয়নমূলক কাজ করলেও আমাদের মতো অবহেলিত হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য কিছুই করেননি। বাংলাদেশের দলিত হরিজনরা এখনো মূল ¯্রােতের সঙ্গে মিশতে পারেনি বলেই হয়তো সরকার তাদেও দিকে নজর দেয়ার সময় পায়নি। তবে বর্তমানে কিছু কিছু স্থানে সমাজে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত এই জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক উন্নয়ন মুলক কাজ করা হচ্ছে। দির্ঘদিন ধরে আমরা আমাদের সমাধির স্থান নিয়ে সমস্যায় আছি। মৃত্যুর পরও মিলছে না আমাদের মতো হরিজনদের শেষ ঠিকানা। এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন হাতীবান্ধা হরিজন গোষ্ঠীর প্রতিনিধি জুয়েল কুমার বাসঁফোর।
জুয়েল কুমার বাসঁফোর আরো বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদনও করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি তিনি একটু আন্তরিক হলে আমাদের সমাধির স্থানের সমস্যার সমাধান সহজে হয়ে যাবে।
সমাজে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশের দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠির মধ্যে অবহেলিত একটি জনগোষ্ঠী যারা সুইপার বা হরিজন নামে পরিচিত। মহাত্মা গান্ধী দলিতদের মেথর বা সুইপার না বলে ‘হরিজন’ বলার অমোঘ বাণী দিয়ে গেছেন। কিন্তু আজো তাদের সমাজ ও সামাজিকতার মূল সমাজের সঙ্গে যুক্ত করেননি। তারপর বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী জাত-পাতের বিভাজন করেই গেছেন। জাত যায় তাদের হাতের জল খেলে। বাংলাদেশের দলিত হরিজনরা এখনো মূল ¯্রােতের সঙ্গে মিশতে পারেনি। ফলে ব্যাপক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে তারা কলোনি ভিত্তিক জীবনযাপন করে যাচ্ছে। সেই হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষদের মৃত্যুর পরেও মিলছে না তাদের সমাধির স্থানটুকুও।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় হরিজন জনগোষ্ঠী বংশ পরম্পরায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ১৮টি পরিবারের মোট ৮৭ জন মানুষ এ উপজেলায় বসবাস করছে। সব মিলিয়ে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার এই অবহেলিত জনগোষ্ঠী বসবাস করে আসছে। এ সম্প্রদায়ের মানুষরা মারা গেলে নির্র্দিষ্ট স্থানে সমাহিত করার জন্য নেই কোন জায়গা। তাই হরিজন সম্প্রদায়ের মৃতদেহ নিয়ে করুণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। সমাধির স্থান না থাকার কারণে বিভিন্ন জায়গায় বা নদীর পাশে অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে লাশ সমাহিত করতে হচ্ছে এই অবহেলিত হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনদের।
হাতীবান্ধার হরিজন সম্প্রদায়ের উজ্জ্বল বাসঁফোর জানান, আমার পিতা শ্রী মদন লাল বাসঁফর ১৯৯৯ সালে মারা যায়। সমাধির স্থান না থাকার কারণে মুসলমানদের কেন্দ্রীয় কবর স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছিল। ওই সময় এ সমাহিত করার বিষয় নিয়ে আমরা সমস্যায় পড়ি। সমাহিতের ৩ দিন পর সেই মৃতদেহ আবার কবর থেকে তুলে রেল-লাইনের ধারে পুনঃরায় সমাহিত করতে হয়ে ছিলো। এছাড়াও পরবর্তীতে আমাদের সম্প্রদায়ের শংকর বাসঁফোরকে নদীর বালুচরে এবং শান্তি রাণী বাসঁফোরকে পুকুরের পাশে সমাহিত করা হয়ে ছিলো। সমাজে পিছিয়ে পড়া হরিজনদের দীর্ঘদিনের এ সমস্যা দূর করতে, হরিজন জনগোষ্ঠীর সকল সদস্যদের পক্ষে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে জুয়েল কুমার বাসঁফোর হাতীবান্ধা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর সরকারি খাস জমিতে সমাধির স্থান বরাদ্দের আবেদন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হয়নি বা উপজেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেননি।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সামিউল আমিন বলেন, আমাকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে বরাদ্দ চেয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন। কোন প্রকার সরকারি বরাদ্দ আসলে হরিজনদের দীর্ঘদিনের সমাধির সমস্যাটি আশা করছি সমাধান হবে।