মহানগরীর বনলতা আবাসিক এলাকার প্লট বরাদ্দে কেলেকারির ঘটনা তদন্তে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই চিঠিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র সরবরাহ পূর্বক আগামি ১ জুলাইয়ের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য আরডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলার রহমানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকালে রাজশাহী দুদকের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘আরডিএ’র বনলতা বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩১ প্লট কেলেকারি ও দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তবে তথ্য হাতে পাওয়ার পর অনুসন্ধানের মুলকাজ শুরু করা হবে। এর আগে বনলতার মূল্যবান ৩১টি প্লট দুর্নীতির অভিযোগে বঞ্চিতরা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মূলত এ তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। অভিযোগের প্রাথমিক ধরণ বিবেচনা ও যাচাই বাছাই শেষে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে রাজশাহীর উপ-পরিচালককে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়ার প্রেক্ষিতে মূলত প্রাথমিক কাজ তারাই করবেন।’
আমার জানা মতে গত ২৪ জুন রাজশাহী সমন্বিত দুদক অঞ্চলের সহকারি পরিচালক (এডি) ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. আল-আমিন স্বাক্ষরিত এই চিঠি দিয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি জুনের প্রথম দিকে প্লট কেলেকারির অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিযুক্ত হন রাজশাহী সমন্বিত দুদক অঞ্চলের সহকারি পরিচালক (এডি) মো. আল-আমিন। এরপর উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র সরবরাহের জন্য গত ২৪ জুন আরডিএ’র চেয়ারম্যানকে তিনি চিঠি দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তসহ মোট ১৫টি ক্যাটাগরিতে ২০১৩ সালে বনলতা আবাসিক প্রকল্পের ১৯৩টি সরকারি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই সময় প্রতি কাঠার দাম ছিল ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত পরিপত্র অনুযায়ী, শতকরা ৫ ভাগ হিসাবে আরডিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ভাগে পড়ে মোট ১০টি প্লট। কিন্তু আরডিএ কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে মাত্র ৪ জন প্লটের জন্য আবেদন করেন। ফলে আরডিএ কোটার অবশিষ্ট ৬টি প্লট রেজ্যুলেশান করে পরে অপেক্ষমান তালিকার অন্য কোটার আবেদনকারীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এদিকে ২০১৭ সালে একই প্রকল্পের অবশিষ্ট ৩১ প্লটের জন্য আবেদন নিয়ে একই হিসাবে প্লট ভাগ-বন্টন করা হয়। তবে এবারে রহস্যজনক কারণে ক্যাটাগরির সংখ্যা কমিয়ে মোট ৯টি করা হয়। আর ক্ষতিগ্রস্ত কোটা রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তাদের বাদ দেয়া হয়। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করলেও তাদের আবেদন করারই সুযোগ দেওয়া হয়নি।
বঞ্চিতদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ৩১ মে আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস ও এষ্টেট কর্মকর্তা বদরুজ্জামান চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে নিজেদের মধ্যে প্লট ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। সরকারি কোটা অনুয়ায়ী শতকরা ৫ ভাগ হিসাবে ৩১ প্লটের মধ্যে আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারিদের ভাগে পড়ে সর্বোচ্চ ২টি প্লট। কিন্তু এই ৩১ প্লটের মধ্যে চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এষ্টেট অফিসারসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন।
বনলতার প্লটের বরাদ্দ তালিকা অনুযায়ী চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নেন সবচেয়ে বড় আয়তনের ৭ কাঠার একটি প্লট। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ৫ কাঠা ও এষ্টেট কর্মকর্তা বদরুজ্জামান নেন ৬ কাঠার প্লট। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের পিয়ন ইউনুস আলী ২টি, অথরাইজড অফিসারের পিয়ন রেজাউল করিম ২টি, আরডিএর নিম্নমান সহকারি শামসুন্নাহার নুন্নী ২টি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ীচালক শরিফুল ইসলাম ১টিসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন।
অভিযোগকারীরা বলেছেন, ৩১ প্লটে জমির পরিমাণ ৬৬ কাঠা। এর মধ্যে আরডিএ’র কর্মকর্তা কর্মচারিরাই নিয়েছেন ৩১ কাঠা। এই হিসাবে অর্ধেক প্লটই তারা নিয়েছেন। তারা আরও বলছেন, পুর্বপরিকল্পনা মোতাবেক নিজেদের মধ্যে প্লট ভাগাভাগির লক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় কোনো প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়নি। উপরন্ত ২০১৩ সালে যে প্লটের দাম ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছিল, চার বছর পরও একই দামে প্লট দেয়া হয়েছে।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, প্লটের মুল্যের ওপর আরডিএ শতকরা ১৩ ভাগ হারে সুদ গ্রহণ করে থাকে। এই হিসাবে ২০১৭ সালে কাঠা প্রতি এসব প্লটের দাম পড়ে ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। চার বছর আগের মুল্যে প্লট বরাদ্দের ফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।
আরডিএর একটি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে পদ্মা আবাসিক এলাকায় প্রতি কাঠা ১২ হাজার টাকা দরে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। একই প্রকল্পের অবশিষ্ট প্লট ১৯৮৬ সালে ২২ হাজার টাকা কাঠা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ওই সময় আমি আরডিএতে ছিলাম না। আর যেহেতু বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে সেহেতু এই বিষয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না।’