ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ পৌর এলাকার অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকাল থেকে বুল ড্রেজার মেশিন দিয়ে শহরের প্রায় শতাধিক অবৈধ দোকান ঘর ও পাকা স্থাপনা দখলমুক্ত করেছে। পৌর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য,শহরকে যানজটমুক্ত করা ছাড়াও নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরনে তারা ওই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চালাচ্ছেন। কালীগঞ্জ শহরকে যানজট মুক্ত ও নাগরিক সেবার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় মাননীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার, পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ ও থানা প্রশাসনের মহৎ উদ্যোগ কে স্বাগত জানিয়েছেন কালীগঞ্জবাসী। উচ্ছেদ অভিযানকালে থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ, গনমাধ্যমকর্মী ও শত শত পৌর উৎসুক জনতা উপস্থিত ছিলেন।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, দক্ষিনঞ্চালের মধ্যে কালীগঞ্জ একটি বানিজ্যক ও ব্যস্ততম শহর। এ শহরের অভ্যান্তরে কিছু অসাধু ব্যাক্তি সরকারী জায়গা দখল করে নানা স্থাপনা নির্মান করে রেখেছে। ফলে শহরের সড়ক গুলো সরু হয়ে প্রতিনিয়ত যানজট হচ্ছে। এছাড়াও দখলবাজদের বেপরোয়া দখলবাজির কারণে সরকারী জায়গা হাতছাড়া হচ্ছে এ কারনেই পৌর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে দখলী জমি পূনরুদ্ধার করে শহরকে যানজট মুক্ত করতে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এ উচ্ছেদ অভিযানে কালীগঞ্জবাসী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। সরকারী নির্দ্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কালীগঞ্জ পৌসভার মেয়র মোঃ আশরাফুল আলম আশরাফ এবং পাকশি রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দ্দেশে মোবারকগঞ্জ রেলষ্টেশন কর্তৃপক্ষ দখলকৃত জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা ও দোকান পাট গুলো নিজ খরচে ভেঙ্গে নেবার অনুরোধ জানিয়ে নোটিশ প্রদান ও মাইকিং করেছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গুলোর পক্ষ থেকে সরকারী জমি অবমুক্ত করতে সার্ভেয়ারের মাধ্যমে মাপযোগ করে লালদাগের চিহ্ন প্রদান করে। তদশর্ত্বেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় কোন অবৈধ দখলদার নিজ উদ্যোগে তাদের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অবকাঠামো গুলো সরিয়ে না নেবার কারণে বুধবার অবৈধ স্থাপনা ভেংগে গুড়িয়ে দেয়। কালীগঞ্জ শহরের এক শ্রেণীর মিয়া মাতবার এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তৎকালীন নলডাঙ্গা রাজা ফনিভূষন দেবরায়ের মৃত্যুর পর রাজবাড়ীতে কর্মরত বড়বাবুখ্যত মৃত বাকের খানের নিকট থেকে দাখিলা ও পরচা মুলে সরকারী ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত কিছু জমি ভূমি জরিপ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ১৯৬২ সাল এবং সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ী নির্মাণ করেছিল। অথচ ১৯২৬ সালের ভুমি জরিপে এসমস্ত স্থাপনা গুলোর সম্পত্তি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য ৬২ ও ৮৭ সালের ভূমি জরিপ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তাদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে এবং কোটকাচারী থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখে।
তিনি আরও বলেন, দু’সপ্তাহ আগে ম্যাপ ধরে শহরের সকল স্থানে পরিমাপের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনায় লাল নিশানা দেয়া হয়েছিল। অবৈধ স্থাপনা নির্মানকারীদের নিজেদেরকে স্থাপনা ভেঙে নেয়ার জন্য গত ২০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দিয়ে শহরে একাধিকবার প্রচার মাইক বের করা হয়। সে সময়ে প্রচার করা হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নিজেরা সরিয়ে না নিলে পরবর্তীতে ভাংচুরের খরচও দখলবাজদেরকে বহন করতে হবে। তাদের সে সময় সীমা পার হয়ে যাওয়ায় পৌর কর্তৃপক্ষ এখন নিজেরা বুল ড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে এখন বুল ড্রেজারের খরচও দখলবাজদের দিতে হবে।
পৌর নাগরিকদের দাবি, অল্প কয়জন দখলবাজের কারণে নাগরিক সুবিধা বাধাগ্রস্থ হতে পারে না। দখলবাজদের সীমাহীন দখলবাজির কারণে সারাবছর দুর্বিসহ যানজট পোহাতে হয় পৌর নাগরিক ও পথচারীদের। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কালীগঞ্জের সকল শ্রেণী পেশার মানুষসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও। পৌর মেয়র বলেন আগামি বুধবার আবার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ফলে নিজেদের মার্কেট বা বসত বাড়ি ভেংগে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।